গৌতম মণ্ডল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: শীতের শুরুতেই সুন্দরবনের লোকালয়ে আবারও বাঘের আতঙ্ক। মিলেছে বাঘের পায়ের ছাপ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুর উপকূল থানার এল-প্লট শ্রীধরনগর এলাকায় ঠাকুরাইন নদীর পাড়ে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নিমেষেই বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। খবর দেওয়া হয় বনদফতর ও পুলিশকে।


ইতিমধ্যেই পুলিশ ও বনকর্মীরা এলাকায় টহল দেওয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি জঙ্গল ও নদী তীরবর্তী লোকালয় নাইলনের জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। যাতে বাঘ কোনভাবেই লোকালয়ে ঢুকতে না পারে। ডিএফও মিলন মণ্ডল জানিয়েছেন, গত পরশু রাতে বনদফতরের কাছে খবর আসে। তারপর থেকে বাঘের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ছাগলের টোপ দিয়ে দুটি খাঁচা পাতা হয়েছে। ড্রোণ ওড়ানো হয়েছে।


কিন্তু এতো গেল লোকালয়ের বাঘের আতঙ্ক। তবে এই জেলারই কিছু মানুষের, প্রাণ হাতে করে মাছ ধরতে যেতে হয়। প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে সুন্দরবনে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন মৎসজীবীরা। কখনও লুকিয়ে বন দফতরের নিষেধ অমান্য করে গভীর জঙ্গলে পেটের জ্বালায়, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে, দুটো পয়সা রোজগারের আশায় পাড়ি দেয় মৎসজীবীদের দল।


গাছগাছালিতে ভরা আর নদীপথের নির্জনতায় আপাতচোখে নিস্তব্ধই থাকে সুন্দরবনে। নেই শহরের মতো একগুচ্ছ ফোনের টাওয়ার। মাইক্রোওয়েভের মাশুল দিতে হয় না পাখিদেরকে। দূর থেকে ভেসে আসে জলরঙা পাখির কলরব। আর এমনই এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মাঝেই মুহূর্তেই সব খান খান। তছনছ, এক আস্ত প্রাণ।


এবারও তার অন্যথা হল না। কাঁকড়া ধরে বাজারে বিকিয়ে ভালো আয়ের আশায় সুন্দরবনের ঝিলা ২নং জঙ্গলে পাড়ি দিয়েছিল তিনজন মৎসজীবী। সাতজেলিয়ার আনন্দপুর থেকে কাঁকড়া (Crab) ধরতে গিয়েছিল তাঁরা। পায়ের ছাপ, মলের গন্ধ থেকে বাঘের উপস্থিতি বরাবরাই যে তাঁরা ধরে ফেলতে ওস্তাদ। এত দিনের অভ্যাষ, অভিজ্ঞতা কী আর বিফলে যাবে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে আর দশ দিনের মতো গতবার তাঁরা কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিল। কিন্তু সব অভিজ্ঞতাই হার মানল ওইদিন। বাড়ি ফেরা হয়নি বিষ্ণুপদ মিস্ত্রির।


আরও পড়ুন, রেশন দুর্নীতির জের, খাদ্যভবন অভিযান BJP-র


ঘড়িতে তখন সকাল ৮টা। স্থানীয় সূত্রে খবর,  ঝিলা ২নং জঙ্গল তিনজন মৎসজীবী সাতজেলিয়ার আনন্দপুর থেকে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিল। বরাবরের মতোই সময় বুঝে এদিনও তাঁরা কাঁকড়া ধরার জন্য টোপ ফেলে। আচমকা সেই সময় জঙ্গল থেকে একটি বাঘ লাফিয়ে নৌকায় উপর পড়ে। এবং বিষ্ণুপদ-র ঘাড়ের উপর ধরে বসে সে।সঙ্গে থাকা অপর দুই সঙ্গী তড়িঘড়ি নৌকার হাল নিয়ে বাঘের দিকে তেড়ে গেলে, বাঘটি বিষ্ণুপদকে ছেড়ে আবার জঙ্গলের দিকে চলে যায়।  সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গীরা তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় গ্রামের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু ততক্ষণে যে সব শেষ। তাঁকে বাড়ির পথে আনার সময়ই মৃত্যু হয় হয় ওই মৎসজীবীর।