গৌতম মণ্ডল ও সন্দীপ সরকার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা : তাদের মনের কথা লিখতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আঁকাবাঁকা কচি হাতে উঠে এসেছে শুধুই বুকফাটা কষ্ট। স্কুল পড়ুয়াদের (School Students) মনের কথা পড়ে স্তম্ভিত শিক্ষকরা (Teachers)।


ড্রপ-বক্সে বিষাদ-পাহাড়


কারও মা নেই। কারও আবার, বাবার আর্থিক সামর্থ নেই। কচি মনের খাতায়, মোটা দাগের এই কষ্টগুলোই ফুটে উঠল টুকরো কাগজে। কাঁপা হাতের লেখায়, স্কুলের ড্রপবক্সে (School Drop Box) জায়গা পেল, মুখ ফুটে না বলতে পারা, বুক ফাটা কথাগুলো। সম্প্রতি, মিডে ডে মিল প্রকল্পের তদারকিতে রাজ্যে আসে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। সেন্ট্রাল টিম আসার আগে রাজ্য়ের স্কুলগুলির কাছে বেশ কিছু নির্দেশিকা যায়। যেমন, পড়ুয়াদের জন্য় ড্রপবক্স। সেইমতো, দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির একটি স্কুলে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য় রাখা হয় এই ড্রপ বক্স। পড়ুয়াদের বলা হয়, চিরকুটে মনের কথা লিখে বাক্সে ফেলতে। সেই ড্রপ বক্স খুলতেই অবাক শিক্ষক-শিক্ষিকারা।


কী বলছে খুদে-মন ?


ড্রপ-বক্স খুলতেই খোঁজ মিলেছে বিষাদ-সিন্ধুর। কেউ লিখেছে, আমরা খুব গরিব। মা নেই। আমার বন্ধুর মায়েরা কত ভালোবাসে। আবার কেউ লিখেছে, আমার বাবাকে পেনসিল বক্স কিনে দিতে বলেছিলাম, কিন্তু বাবার কাছে টাকা ছিল না। তাই বাবা কিনে দেয়নি। কারোর আবার আফশোশ, সে নাচ শিখতে চেয়েছিল, কিন্তু বাড়ির লোক সেই ইচ্ছেতে দেয়নি আমল। কেউ লিখেছে, আমি বাড়িতে থাকি, কিন্তু আমাকে কেউ ভালোবাসে না, আমি কাউকে বলতে পারি না, খুব খারাপ লাগে। কেউ আবার লিখেছে, আমি আমার মাকে খুব মিস করি, আমার মার এত কাজ সেই জন্য় আমি আমার মাকে কাছে পাই না।


চিন্তিত সকলে


এরকমই প্রায় ডজন খানা চিরকুট জমা পড়েছে। প্রতিটাতেই বুকচাপা কষ্ট। এইটুকু বয়সে এত কষ্টের পাহাড় ! কোথায় চেপে রাখে এই খুদের দল ? ভাবাচ্ছে অভিভাবক থেকে শিক্ষক, সবাইকেই। যে প্রসঙ্গে মনোবিদ প্রথমা চৌধুরী বলেছেন, 'বাচ্চাদের মনের কথা জানলে হবে না। পড়তে হবে। বাচ্চাদের থেকে জানা, তাঁদেরকে বেছে বেছে যন্ত্রণায় ভুগছে, রুটিন করে কথা বলা। নিয়মিত সাবজেক্টের মধ্য়ে রাখতে হবে। আগে স্কুলে গল্প বলার ক্লাস হতো। দরকার পড়লে শোনার ক্লাস করতে হবে। এটা যে বলেছে সেটাই বড় ব্য়াপার। বাচ্চারা অনেক মনকষ্টে ভোগে। আমরা এড়িয়ে যাই। এটা শুধু জানলে হবে না। পদক্ষেপ করতে হবে।'


আরও পড়ুন- 'আন্দোলনের ফলেই স্বচ্ছতা' অভাবের সংসারে আশার আলো জুগিয়ে 'আন্দোলনের জয়' বললেন টেটে প্রথম ইনা