রঞ্জিত হালদার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ভোট মিটতেই দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রকাশ্যে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। ভাঙড়ের দাপুটে নেতা জেলবন্দি আরাবুল ইসলামের দিকে নিশানা করে বিস্ফোরক অভিযোগ সওকত মোল্লার। পদ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলা, আইএসএফ-এর সঙ্গে হাত মেলানো -সহ আরও একাধিক অভিযোগ সওকতের (Saokat Molla)। এমনকী আরাবুলের তৃণমূলের প্রধানের স্বামীকে খুনের চক্রান্তের অভিযোগও তুলেছেন তিনি। আর সেই কথা না কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) তাঁকে বলেছিলেন।
ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক সওকত মোল্লা বলেন, 'মাঝখানে খইরুলকে মার্ডার করতে হবে পরিকল্পনা শুরু হল, আমরা কিছুই জানি না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একদিন আমাকে বললেন- ভাঙ্গড়ে নেতাগিরি করছ, ওখানে একজন প্রধান আছেন, তাঁর স্বামীর নাম খইরুল। তাকে মার্ডার করার জন্য ১৮ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে। তুমি যে আরাবুল আরাবুল কর, সেই আরাবুলই এই ঘটনার মূল নায়ক। ওকে আমার ওপর ছেড়ে দাও।'
ভাঙর ২ নম্বর ব্লকের ভগবানপুর পঞ্চায়েতের প্রধান মারুফা বিবির স্বামীকে খুনের চক্রান্ত থেকে পঞ্চায়েতের পদ পাইয়ে দিতে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলার চাঞ্চল্যাকর অভিযোগ। আরাবুলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক সওকত মোল্লা। তাঁর অভিযোগ, 'এইখানে দায়িত্বে আসার পর, আমরা সব চেয়ে বেশি আমি গুরুত্ব দিয়েছিলাম, এই ভাঙড়ের একজন নেতা ছিলেন যাঁর নাম, আরাবুল ইসলাম। নাম না করাই ভাল অনেকে বলছেন। এখানে যে ঘটনা ঘটিয়েছে, আপনারা শুনলে অবাক হবেন। আমার কাছে গত পরশু দিন ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার একটা চিঠি এসেছে, কয়েকটি চিঠি। পঞ্চায়েতে টিকিট দেওয়ার নাম করে ৬ লক্ষ টাকা থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কেউ কেউ নিয়েছে। কারও কারও কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। প্রধান করার জন্য, এখানে অনেকেই বসে আছেন, কারও কাছ থেকে ২৫ লাখ, ৩০ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে।'
নিশানায় ভাঙড় ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দাপুটে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম (Arabul Islam)। আক্রমণকারী ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক। নজিরবিহীনভাবে আরাবুলের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন সওকাত মোল্লা। মঙ্গলবার ভাঙড় কলেজ মাঠে দলীয় সভায় যোগ দেন তৃণমূল বিধায়ক। সেই সভা থেকেই আরাবুলকে নিশানা করেন তিনি। লোকসভা ভোটে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ করেন আরাবুল ঘনিষ্ঠ জেলা পরিষদ সদস্যা খাদিজা বিবির বিরুদ্ধে।
লোকসভা ভোটে জেলা পরিষদ সদস্যার 'অন্তর্ঘাত'
ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক সওকত মোল্লা বলেন, 'লোকসভা নির্বাচনেও অন্তর্ঘাত করা হয়েছে। খাদিজা বিবি যে জেলা পরিষদের সদস্য, একেবারে ভেতর থেকে চক্রান্ত করে, ISF-এর সঙ্গে ভিতর থেকে জোট বেঁধে, এখানে যাতে তৃণমূল হেরে যায়, যাকে ভোটে জেতানোর জন্য সেদিন হয়ত আমাদের কয়েকজন কর্মী খুন হতো, তার মধ্যে আরাবুল ইসলামও ছিল এই কাঁঠালিয়াতে। সেই খাদিজা দলের সঙ্গে গদ্দারি শুরু করল। ভোটের ৫ দিন ৭ দিন আগে থেকে কিছু বেইমান দু'একজন বেশি না, তারাও বিভিন্নভাবে অন্তর্ঘাত করার চেষ্টা করেছে ভাঙড়ে।' এ বিষয়ে জেলা পরিষদ সদস্যা খাদিজা বিবি জানিয়েছেন, সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খুলবেন না। যা বলার দলীয় কর্তাদের জানিয়েছেন।
ভাঙড়ের দাপুটে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। যাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিতর্কের পর বিতর্ক। ২০১২ সালে ভাঙড় কলেজে ঢুকে অধ্যাপিকাকে জলের জগ ছুড়ে মারার অভিযোগ ওঠে তাঁর। সেই সময় তিনি কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি ছিলেন! এই আরাবুলকেই একসময় তাজা নেতা আখ্য়া দিয়েছিলেন মদন মিত্র! ২০১৪ সালে আরাবুলকে ৬ বছরের জন্য় বহিষ্কার করে তৃণমূল। কিন্তু, দেড় বছরের মধ্য়েই তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর একটি খুনের মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অতীতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ‘গুরু’ এবং নিজেকে ‘শিষ্য’ বলে দাবি করেছেন আরাবুল। দু'জনেই এখন জেলবন্দি।
আরও পড়ুন: কতগুলি সিমকার্ড আপনার নামে? নয়া আইন ভাঙলে শুরুতেই মোটা টাকা জরিমানা