মুন্না আগরওয়াল, দক্ষিণ দিনাজপুর: টোটো চালিয়ে যা উপার্জন। তা থেকেই চলেছে সংসার। আর পড়িয়েছেন মেয়েটাকে। বাবার শ্রমের মূল্য নিজের মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে কানায় কানায় চুকিয়েছেন সৃজিতা বসাক। উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যের মেধাতালিকায় চতুর্থ স্থান নিয়েছেন তিনি। প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৩। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকা ডাঙ্গারহাট এলাকায় এই পরিবারটি প্রচারের আলোয় এসেছে মেয়ের দৌলতেই। লড়াকু মেয়ের এই চমকপ্রদ রেজাল্ট দেখে ধন্য ধন্য় করেছেন অনেকেই। এবার তাঁরা বাবার লড়াইকে সম্মান জানাল জেলা পরিবহন দফতর।


টোটো রেজিস্ট্রেশন করানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তাতে বেশ অনেকটাই টাকা লাগে। মেয়ের পড়াশোনা, সংসার খরচ সব চালিয়ে টোটোর রেজিস্ট্রেশনেকর খরচ বের করতে পারছিলেন না সৃজিতার বাবা সুজিৎ বসাক। এবার তাঁর পাশে দাঁড়াল জেলা পরিবহন দফতর। শুক্রবার 


মেধাতালিকায় রাজ্যে চতুর্থ সৃজিতা বসাকের পরিবারের পাশে দাঁড়ালো পরিবহন দফতর। উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৯৩ নম্বর পেয়ে রাজ্যে চতুর্থ সৃজিতার বাবা সুজিৎ বসাক পেশায় সামান্য টোটো চালক। পয়সার অভাবে এতদিন তার টোটোর রেজিস্ট্রেশন করাতে পারেন নাই। বিনা রেজিস্ট্রেশনেই টোটোর চালিয়ে সংসার ও মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোটাতেন। আজ পরিবহন দফতরের RTO সন্দীপ সাহা এবং দফতরের আরও অনেকে মিলে নিজেরা টাকা তুলে রেজিস্ট্রেশনের খরচ তোলেন। সেই টাকা জমা করে সৃজিতার বাবার টোটোর রেজিস্ট্রেশন এবং নথি বানিয়ে উপহার দিলেন তাঁরা। 


এবারের উচ্চমাধ্যমিকে কুমারগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার ডাঙ্গারহাট হাইস্কুলের ছাত্রী সৃজিতা সাহা রাজ্যের মেধাতালিকায় চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে। কলা বিভাগে ছাত্রী সৃজিতা উচ্চ শিক্ষা নিয়ে শিক্ষিকা ও সমাজসেবী হতে চান।


সৃজিতার বাবা সুজিত বসাক সামান্য টোটো চালক। টোটো চালিয়েই সংসার ও দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগান। মেয়ের সাফল্যে তাঁরা খুশি। কিন্তু পিছু ছাড়ছে না চিন্তা। কারণ উচ্চশিক্ষার জন্য অর্থের প্রয়োজন। টোটো চালিয়ে কতটা মেয়ের পাশে দাঁড়ানো যাবে তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন বসাক পরিবার। পাশাপাশি টোটোর রেজিস্ট্রেশন না থাকায় যে কোনও সময় নিয়মের কারণেই টোটো চালানোও অনিশ্চিত হতে পারে বলে উদ্বেগে ছিলেন তিনি। অর্থের চিন্তা পুরোপুরি না মিটলেও পেশাগত চিন্তা কিছুটা হলেও কমেছে হাতে নথি পেয়ে। সূত্রের খবর, প্রথমে সৃজিতার সাফল্যের কথা জানতে পারেন পরিবহন দপ্তরের আরটিও সন্দীপ সাহা। তারপর খোঁজ নিতে গিয়ে তাঁর পরিবারের কথাও জানতে পারেন। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কিছু একটা করবেন। তারপরেই সবাই মিলে এমন কাজ। ইতিমধ্যেই তাঁর বদলির অর্ডার হয়ে গিয়েছে, সোমবার অন্য জায়গায় যোগ দেবেন। তার আগেই কাজটি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় করে ফেলেন তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা।


আজ, টোটোর লাইসেন্স ও কাগজপত্র হাতে পেয়ে খুশি সৃজিতার বাবা সুজিত বসাক। তিনি বলেন, 'আমি খুব আনন্দিত। আমি ভাবতেই পারছি না এমনটা হবে। সব মেয়ের জন্য। মেয়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাব।'


দক্ষিণ দিনাজপুরের আরটিও সন্দীপ সাহা, 'সৃজিতা যেভাবে লড়াই করে উঠে এসেছে তাতে তো বলার কিছু নেই। এটা সৃজিতা ও তাঁর বাবার প্রতি আমাদের সম্মান জানানো।'


আরও পড়ুন: শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে বিশেষভাবে উপকারী নারকেল, কীভাবে ব্য়বহার করবেন?