কলকাতা: দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে ফাটল যে চওড়া হচ্ছে, মঙ্গলবার ফের তা ধরা পড়ল। বিগত কয়েক দিন ধরেই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির (SSC Recruitment Scam) অভিযোগে একনাগাড়ে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee) নিশানা করে আসছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। মঙ্গলবার সেই মামলাতও পার্থকে সিবিআই (CBI) দফতরে হাজিরার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। অবধারিত ভাবেই কুণালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে পার্থ প্রকাশ্য়ে কাদা ছোড়ছুড়িতে না গেলেও, এ দিন ফের কটাক্ষের সুর শোনা গেল রাজ্যের অন্য মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) গলায়। নিজেদের দলের 'শৃঙ্খলাপরায়ণ সৈনিক' বলে মন্তব্য করেন তিনি। সরাসরি কুণালের নাম যদিও মুখে আনেননি ফিরহাদ, তবে এমন মন্তব্য করে ফিরহাদ আসলে কুণালকে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৈরি অনুশাসনই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বলে মনে করছেন তৃণমূলের একাংশ।


একই দিনে পার্থকে সিবিআই হাজিরার নির্দেশ আবার স্থগিতাদেশও


এসএসসি দুর্নীতি মামলা নিয়ে এই মুহূর্তে উত্তাল গোটা রাজ্য।  এসএসসি-র গ্রুপ ডি পর্যায়ে নবম এবং দশম শ্রেণির নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মঙ্গলবার শুনানি চলছিল কলকাতা হাইকোর্টে। সেখানে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থকে সিবিআই গোয়েন্দাদের সামনে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যেই সিবিআই দফতরে পৌঁছতে বলা হয় তাঁকে। পার্থ এর পর ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন সঙ্গে সঙ্গে। তাতে সাময়িক স্বস্তি মেলে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিষয়টি নিয়ে ফের শুনানি ঠিক হয়েছে। তাই আপাতত এ দিন সিবিআই দফতরে যেতে হচ্ছে না পার্থকে। 


ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের পরই এ দিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন পার্থ। সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন ফিরহাদ, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং সম্প্রতি জোড়াফুল শিবিরে যোগদানকারী জয়প্রকাশ মজুমদার। আদালতের নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন কতরলে সেখানে পার্থ বলেন, "বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলব না। আইন আইনের পথে চলবে।" কুণালের সাম্প্রতিককালীন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য এবং তার জেরে উদ্ভুত বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যেতে দেখা যায় পার্থকে। “দলের ভিতরেই সব বিতর্ক নিয়ে আলোচনা হবে, বাইরে নয়,” বলে মন্তব্য করেন পার্থ। 


আরও পড়ুন: Partha Chatterjee Update: 'আইন আইনের পথেই চলবে', আদালতের নির্দেশ নিয়ে বললেন পার্থ


ওই সাংবাদিক বৈঠকেই এ নিয়ে ইঙ্গিত পূর্ণ ভাবে ফিরহাদকে বলতে যায় যে, "আমরা দলের শৃঙ্খলাপরায়ণ কর্মী। দলের অনুগত। এই ধরনের তরজায় থাকব না আমরা। আমাদের পার্টির ফোরাম রয়েছে। যাঁদের দরকার, সেখানে গিয়ে কথা বলতে পারেন। দল দলের কথা বলবে। এ নিয়ে বাইরে আলোচনা করব না।"


এর আগেও কুণালের খোঁচার জবাবে পার্থর পাশে দাঁড়িয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন ফিরহাদ। গত শনিবার তিনি বলেন, "পার্থদার ক্যাবিনেটে আমিও মন্ত্রী। যদি কোনও জায়গায় হয়, তাহলে যতটা দায়িত্ব পার্থদার, ততটা আমারও। এটা আমাদের যৌথ পরিবার। কারও কাছে কারও দায় ঠেলতে পারি না। কুণাল ক্যাবিনেটের মন্ত্রী নন।"


তৃণমূলের অন্দরে সংঘাত পরিস্থিতি নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে


তার জবাবে পাল্টা কুণাল বলেন, "আমাকে যেন কেউ মনে করিয়ে না দেন যে আমি মন্ত্রী নই। মন্ত্রী নিয়ে হ্যাংলামি নেই। মন্ত্রী হতে না পারলে যাদের জীবন অসম্পূর্ণ, এসব ক্রাইটেরিয়া তাদের... যেদিন আমি দেখব অতিথি শিল্পী বা ভাড়াটে সৈন্য দিয়ে আমাকে ডিফেন্ড করাতে হচ্ছে তার থেকে থুতু ফেলে ডুবে মরা ভাল।"


সোমবার আবার একটি মামলার প্রেক্ষিতে আদালতে দাঁড়িয়ে কুণাল ঘোষ বলেন, "আইকোর মামলায় যাঁকে মঞ্চে উঠে বক্তৃতা করতে দেখা গেছে, যিনি আইকোর মডেলকে তুলে ধরেছিলেন, বাইরে থেকে তিনি আমাকে তখন পাগল বলেছিলেন। তিনি মন্ত্রী। দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঘাড় ধরে জেলে ঢোকানো দরকার। যাঁরা ষড়যন্ত্রী, তাঁরা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন"। 


মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশের পর যদিও এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হনিন কুণাল। বরং বলেন, "কাল সোমবার ছিল, আজ মঙ্গলবার। কিছু বলব না। সিনিয়ররা দেখছেন।" এর পরই সাংবাদিক বৈঠকে পার্থর হয়ে জবাব দেন ফিরহাদ হাকিম। তাই এসএসসি দুর্নীতি মামলা  শাসকের অন্দরের সমীকরণ নিয়ে এখন নানা জল্পনা শোনা যাচ্ছে।