ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, সুকান্ত মুখোপাধ্যায় ও প্রকাশ সিন্হা, কলকাতা: সম্প্রতি অর্পিতাকে জেলে গিয়ে জেরা করা হয়েছে। এবার বুধবার জেলে গিয়ে জেরা করা হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও। ইডির একটি দল তাঁকে জেরা করতে প্রেসিডেন্সি জেলে যায়। সূত্রের খবর, এর মধ্য়েই পার্থ ও অর্পিতার আরও যৌথ সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। সূত্রের খবর, বুধবার সেসব নিয়েই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়। ইডি (ED) সূত্রে দাবি, ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে পার্থ-অর্পিতার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শেয়ার হস্তান্তর হয়েছে। এর আগেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের দুটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সেখান থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ সোনা (Gold) উদ্ধার হয়েছে। ইডির হাতে এসেছে একাধিক নথিও। সেই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির পাশাপাশি এবার বিভিন্ন জায়গায় জমি-বাড়ির খোঁজও মিলেছে। তদন্তে উঠে এসেছে বিভিন্ন সংস্থার কথাও। এগুলিরই উৎস সন্ধানের তদন্ত চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
মঙ্গলবার জেলে গিয়ে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে (Arpita Mukherjee) জেরা করা হয়। বুধবার জেরা করা হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee)। বুধবার দুপুরে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে পৌঁছন ইডির ৩ অফিসার। সেখানেই পয়লা বাইশ ব্লকের ২ নম্বর সেলে বন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
আরও সম্পত্তির হদিস:
ইডি সূত্রের দাবি, পার্থ-অর্পিতা জেলে যাওয়ার পরে আরও নথি মিলেছে। তার মাধ্যমেই জানা গিয়েছে যে, পার্থ ও অর্পিতার নামে আরও কিছু যৌথ ব্যবসা আছে। মঙ্গলবার সেই নথিগুলি সামনে রেখেই অর্পিতাকে জেরা করা হয়। সেই সময়েই নাকি সব নথির সত্যতা স্বীকার করেছেন অর্পিতা, এমনই দাবি ইডির একটি সূত্রের। তারপরেই এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও জেরা করে ইডি। অর্পিতার বয়ানকে সামনে রেখেই নানা প্রশ্ন রাখা হয় প্রাক্তন মন্ত্রীর সামনে।
কী অভিযোগ:
ইডির দাবি, বিভিন্ন ভুয়ো কোম্পানি তৈরি করে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করা হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের সদস্যদের মধ্য হয়েছে শেয়ার ট্রান্সফার (Share Transfer)। এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম হল 'অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড। ওই সংস্থার নথিতে রয়েছে বাবলি-সোহিনী ও কল্যাণময় এই তিনটে নাম। অর্পিতার বেলঘরিয়ার ক্লাব টাউন হাইটসের ফ্ল্যাট থেকে যেদিন ২৮ কোটি টাকা উদ্ধার হয়। সেদিনই ফ্ল্যাটে এই কোম্পানির নথিও মেলে। কোম্পানি বিষয়কমন্ত্রকের তথ্য খতিয়ে দেখা যায়, এই কোম্পানির বর্তমান ঠিকানা অর্পিতার ক্লাব টাউনের 8A ফ্ল্যাট।
ইডি কী দাবি করছে:
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, ২০১২ সালে ‘অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড’ কোম্পানি তৈরি হয়। তখন এই কোম্পানির ৭৫ শতাংশ শেয়ার ছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে সোহিনী চট্টোপাধ্যায়ের নামে। ১৫ শতাংশ প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর প্রয়াত স্ত্রী বাবলি চট্টোপাধ্যায়ের নামে এবং ১০ শতাংশ শেয়ার ছিল জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্যের নামে। ইডি সূত্রে আরও দাবি, ২০১৭ সালে ‘অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড’-এর পুরো শেয়ারই হস্তান্তর হয়ে যায়। ৫০ শতাংশ শেয়ার যায় পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামে। সংস্থার বাকি পঞ্চাশ শতাংশ অর্পিতার জামাইবাবু কল্যাণ ধরের নামে। এরপরেই ২০১৯ সালে ‘অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড’-এর ঠিকানাও বদলে যায়। আগে এই সংস্থার ঠিকানা ছিল হাওড়া। পরে তা বদলে যায়। ঠিকানা হয়ে যায় অর্পিতার বেলঘরিয়ার ক্লাব টাউন হাইটসের ফ্ল্যাট। বৃহস্পতিবার পার্থ ও অর্পিতাকে ফের আদালতে তোলা হবে।
আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে কাদের হাজিরার নির্দেশ হাইকোর্টের? অনুব্রত-কন্যাকেও তলব