রানা দাস, পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের (East Burdwan) নাদনঘাটের (Nadanghat) ন’পাড়ার একটি স্কুলে পড়াতেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের (Subrata Mukherjee) বাবা অশোকনাথ মুখোপাধ্যায়।  ওই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন প্রয়াত মন্ত্রী।  নাদনঘাটের যে বাড়িতে সেই সময় থাকতেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পরিবার, আজ সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা (Homage) জানান ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ (Swapan Debnath)। স্কুলের সহপাঠীদের (Classmates) অনেকে সেখানে প্রয়াত পঞ্চায়েতমন্ত্রীর ছবিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।


সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলা। গতকাল রাত ৯টা ২২-এ এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যু হয় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। রাতে পার্ক সার্কাসের পিস ওয়াল্ডে রাখা হয় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃতদেহ। আজ সকালেই দেহ নিয়ে যাওয়া হয় রবীন্দ্র সদনে। দুপুর ২টো, রবীন্দ্রসদনে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাখা থাকবে মরদেহ।  দুপুর ২টোয় রবীন্দ্রসদন থেকে গন্তব্য বিধানসভা। প্রয়াত নেতার মৃতদেহ বিধানসভা থেকে নিয়ে যাওয়া হবে বালিগঞ্জের বাড়িতে। এরপর কেওড়াতলা শ্মশানে হবে শেষকৃত্য।


দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের স্মৃতিচারণে উঠে এল পরিহাসপ্রিয়, মেধাবী, কর্মদক্ষ এক রাজনীতিবিদের কথা। বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "গত পাঁচ বছর কাছে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। বিধায়ক হওয়ার পর কাছে দেখেছি, গল্প করেছি। উনি রাজনীতিতে সবার অভিভাবক ছিলেন। মজা করে বলতাম দ্য গ্র্যান্ডফাদার অফ বেঙ্গল পলিটিক্স। তার থেকে সিনিয়র শোভনদা আছেন। কিন্তু সুব্রতদা আলাদা জায়গা। তিনি মেয়র থেকে মন্ত্রী। যোগ্যতার পরিচয় রেখেছেন। মহীরূহের পতন হল। যারা রাজনীতিতে আছি সবার দায়িত্ব সেই শূন্যতা পূরণ করা। বাংলার রাজনীতিতে বড় গ্যাপ তৈরি হল।''


আরও পড়ুন: Subrata Mukherjee Death: ভাইফোঁটায় নাড়ু খেতে চেয়েছিলেন,পড়ে রয়েছে কৌটো ভর্তি হয়ে, শোকবিহ্বল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোনেরা


বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, "বঙ্গবাসী কলেজে পড়ার সময় ছাত্র রাজনীতিতে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন প্রাথমিক শিক্ষক। থাকতেন বজবজে। সেই সময় থেকে চিনি। তিনি যখন মেয়র ছিলেন, তখন তাঁর কথাবার্তা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার বিষয়ে আলাদা ধাঁচের ছিল। সুব্রত কংগ্রেস ঘরানা এবং তারপর তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু সবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন।''


স্মৃতিচারণায় কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, "সুব্রতর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ৫০ বছরের, হার্ডিঞ্জ হস্টেলে আমরা রাতে থাকতাম বোর্ডার হিসেবে। প্রায়ই ছাত্র পরিষদের মিটিং হত। নেতৃত্ব দিতেন প্রিয়দা। সঙ্গে আমি, সুব্রত, নুরুল। চিন্তার পার্থক্য হয়েছে, কিন্তু মনের পরিবর্তন হয়নি। বন্ধুত্বকে বিসর্জন দেয়নি রাজনীতির চাপের কাছে। ওর মৃত্যু বাংলার রাজনীতিতে ইন্দ্রপতন। যখন হাসপাতালে দেখতে গেলাম, বলল কেমন আছিস। বললাম তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হও। বাড়ি এসে খবর দাও। আমরা একসঙ্গে চা খাব। অনেকদিন আড্ডা হয় না, একটু আড্ডা হবে। সেই আড্ডাটা হল না। এই দুঃখ, যন্ত্রণা বুকের মধ্যে থেকে যাবে।''