কলকাতা: বিজেপি-র বিরুদ্ধে একজোট হতে বিরোধী শিবিরের কাছে নতুন করে দরবার। সেই মর্মে বিভিন্ন রাজ্যের অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) এবং নেতাদের চিঠি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু বিজেপি-র (BJP) বিরুদ্ধে আদৌ তিনি লড়াইয়ে প্রস্তুত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সিপিএম-এর (CPM) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakraborty)। তাঁর অভিযোগ, গোায়য় বিজেপি বিরোধী ভোটে ভাগ বসাতেই দেখা গিয়েছে তৃণমূলকে (TMC)। ত্রিপুরাতেও সেই একই পন্থা অবলম্বন করতে দেখা গিয়েছে তাদের। তাই তাদের এই দ্বৈত অবস্থান অবশ্যই প্রশ্নের উদ্রেক করছে বলে মত সুজনের।


বিজেপি বিরোধীদের মমতার চিঠির প্রসঙ্গে কটাক্ষ সুজনের


বগটুইকাণ্ড নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই সোমবার অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রী এবং নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছেন মমতা। তাতে সিবিআই, ইডি-র মতো সংস্থাকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে বেল অভিযোগ তুলেছেন তিনি। দেশব্যাপী বিরোধী শক্তিগুলিকে তাই একজোট হওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে রণকৌশল তৈরির জন্য বৈঠকেরও আহ্বান জানিয়েছেন।


কিন্তু কেন্দ্রে বিজেপি বিরোধী জোটের সমর্থক হলেও, মমতার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুজন। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি একটি সম্পূর্ণ অন্য ধরনের দল। দেশের সবচেয়ে বিপজ্জনক দল আরএসএস-এর অংশীদার তারা, যাদের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনও সম্পর্ক ছিল না বিশ্বাসঘাতকতা করা ছাড়া। ওরা আমাদের দেশের সংবিধান মানে না। মানে না দেশের পরম্পরা, নানা ভাষা-নানা মত-নানা পরিধানের বাস্তব অবস্থানকে। বিজেপি যেমন সাম্প্রদায়িক, তেমন স্বৈরাচারী। বরাবর তা বলে আসছি আমরা বামপন্থীরা। অন্য কনও দল এত ধারাবাহিক ভাবে ওদের বিরুদ্ধে অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। কিন্তু বাংলায় একই মনোভাব নিয়ে চসলছে তৃণমূল। বাংলায় তাই তৃণমূল-বিজেপি, উভয়ের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার কথা বলেছি।’’


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee Update: রাজনৈতিক স্বার্থে সিবিআই-ইডিকে ব্যবহার! বিজেপি বিরোধী জোটকে ঐক্যের বার্তা মমতার


বাংলায় বিজেপি-কে তৃণমূলই এনেছে, দাবি সুজনের


মমতা বিজেপি-কে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেও, তৃণমূলের অবস্থান কী, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সুজন। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল বিজেপি-র বিরুদ্ধে বলতেই পারে। কিন্তু এই কথা বলার যোগ্যতা ওদের আছে তো? সবাই দেখেছেন, গোয়ায় বিজেপি বিরোধী ভোট যাতে ভাগ হয়ে যায়, বিজেপি-র যাতে সুবিধা হয়, তার ব্যবস্থা করেছে ওরা। ত্রিপুরায় বিজেপি-র বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ থাকলেও, সেখানেও বিরধী ভোট ভাগ করতে নেমেছে তৃণমূল। বিজেপি-কে বাংলায় এনেইছে তৃণমূল। দেশে তাদের সঙ্গে সরকারও গড়েছে। তাহলে কি দ্বৈত অবস্থান নিচ্ছে তৃণমূল? এমন চললেকিন্তু ধরা পড়ে যাবে! বিজেপি-র বিরুদ্ধে অবশ্যই সকলকে একজোট হতে হবে, নীতিগত অবস্থান থেকেই বিরোধিতা করতে হবে।তৃণমূল সেই পথে চলতে পারবে তো! নাকি কায়দা করছে!’’


২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই ঐক্যবদ্ধ ভাবে দিল্লি দখলের লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন মমতা। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আগে থেকেই বিরোধী জোটের সলতে পাকানোর কাজ শুরু করে দিতে বলতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এমনকি সেই উপলক্ষে দিল্লিতে সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী,শরদ পওয়ারের কাছে দরবারও করেছেন। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপি-র বিরুদ্ধে এই অবস্থানে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাতে আপত্তি নেই বলে আগেই জানিয়েছে বাম শিবির। কিন্তু বিজেপি বিরোধী জোটে নেতৃত্ব সঙ্কটের প্রশ্ন উস্কে দিয়ে, একাধিক রাজ্যে বিরোধী ভোটে ভাগ বসিয়ে তৃণমূল আসলে বিজেপি-র সুবিধাই করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ বাম-কংগ্রেসের।