সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্ট জমা দিল সিবিআই। সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া সেই রিপোর্টে মানিক ভট্টাচার্যর উল্লেখ রয়েছে। মানিক ভট্টাচার্য কীভাবে নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁর প্রভাব কতটা ছিল, তারই একটা সুস্পষ্ট ধারণা হয়েছে ওই রিপোর্টে।


কী বলা হয়েছে রিপোর্টে:
সিবিআই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, 'প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বিভিন্ন বৈঠক মানিক ভট্টাচার্যর নিয়ন্ত্রণে ও নির্দেশে হত। বাকি সদস্যদের যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্মতি জানাতে হত। ২০১৬ এবং ২০১৮, দুই বার মানিকের মেয়াদ রাজ্য সরকার বাড়িয়েছিল পদে বসিয়ে রাখার জন্য। জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন তৎকালীন সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচী, এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে সিবিআই রিপোর্টে। সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, পর্ষদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল মানিক ভট্টাচার্যর হাতে, তদন্তের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি সবটা এড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিছু চাকরিপ্রার্থীকে বাড়তি এক নম্বর দেওয়া হয়েছিল, সেই কারণেই তাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন। ওই ব্যক্তিদের চাকরি দেওয়ার মাধ্যমে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। বোর্ডের যে বৈঠকে এই বাড়তি নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল সেখানে উত্তর ২৪ পরগনা এবং মুর্শিদাবাদ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। উত্তর ২৪ পরগনার ১১, মুর্শিদাবাদের ২৬, বীরভূমের ১৩ জনকে দেওয়া নিয়োগপত্রের নম্বর যোগ্যতামানের থেকে কম। কলকাতা , কোচবিহার এবং পুরুলিয়ার ৩৬ জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে যাঁরা টেট উত্তীর্ণ হননি। সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া রিপোর্টে এমনটাই জানিয়েছে সিবিআই। রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, উর্দু মাধ্যমের ২ জন প্রার্থী যাঁরা বাংলা ভাষায় টেট উত্তীর্ণ হতে পারেননি, তাঁদের বাংলা মাধ্যম স্কুলে  নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে।


এই রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ এই রিপোর্টে নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে মানিক ভট্টাচার্যর কী রকম যোগ রয়েছে তার একটা সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে।


শান্তনু নিয়েও নয়া তথ্য:
এবার নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তৃণমূল নেতা শান্তনুর সঙ্গে নতুন ২৬ জন চাকরিপ্রার্থীর লেনদেনের সন্ধান পেল ইডি। শান্তনুর বাড়িতে ৩০০ জনের তালিকা মিলেছিল। তার বাইরে এই অতিরিক্ত চাকরিপ্রার্থীদের খোঁজ মিলেছে। ইডির দাবি, এঁদের কাছ থেকে শান্তনুর কাছে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা গিয়েছে। দিনমজুরদের দিয়ে কাজ করিয়ে তাঁদের অজান্তে চেকবুকে সই করিয়ে টাকা নয়ছয় করা হত, দাবি ইডির। লোটাস কনস্ট্রাকশন নামে এক কোম্পানির অ্যাকাউন্টকে কালো টাকা সাদা করার জন্য ফান্ড রুট হিসেবে ব্যবহার করা হত, দাবি ইডি-র।


ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেন:
ইডি তদন্তে উঠে এসেছে, শান্তনুর বাড়ি থেকে যে ৩০০ জনের তালিকা পাওয়া গিয়েছিলো তাঁদের ছাড়াও আরও ২৬ জন প্রার্থীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। যেখানে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে শান্তনুকে। এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে, সেটাকে নির্ভর করেই তদন্ত এগোচ্ছে।  লোটাস কনস্ট্রাকশন নামে অন্য একজনের কোম্পানিকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার পাইয়ে দিতেন শান্তনু। সেই কোম্পানির অ্যাকাউন্ট কালো টাকা সাদা করার জন্য ফান্ড রুট হিসাবে ব্যবহার করতো শান্তনু। অভিযোগ এমনটাই।


আরও পড়ুন: গরমের মরসুমে চুলের পাশাপাশি কীভাবে যত্ন নেবেন স্ক্যাল্পের? রইল কিছু সহজ টিপস