আশাবুল হোসেন ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়: বিধানসভা নির্বাচনের পর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও পরাজিত হয়েছে বিজেপি (BJP)। এবার ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝাঁপাচ্ছে তারা। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে ইমাম-মোয়াজ্জমদের নিয়ে বৈঠক করতে চলেছে তৃণমূল। তার আগে সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন নিয়ে তৃণমূল (TMC) নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) তীব্র আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। 


আগামী ২১ অগাস্ট নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মোয়াজ্জেমদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেল। সেই নিয়েই বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতা। বৃহস্পতিবার মমতার উদ্দেশে শুভেন্দু বলেন, "কেন টুপি পরাচ্ছেন আপনি সংখ্যালঘু মুসলিমদের ভোট নেওয়ার জন্য? চাকরি দিতে পেরেছেন? শিক্ষা দিতে পেরেছেন? বাসস্থান দিতে পেরেছেন?"


বাংলার রাজনীতিতে ভোটবাক্সে বরাবরই নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেন সংখ্যালঘুরা। একসময় যাঁরা বামেদের পক্ষে ছিলেন, ২০১১ সালে পালাবদলের পর সেই ভোটব্যাঙ্কের কার্যত একচেটিয়া সমর্থন পেয়ে আসছে তৃণমূল। এই প্রেক্ষাপটেই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে, তৃণমূল যখন ইমাম-মোয়াজ্জেমদের নিয়ে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক সেই সময় সংখ্যালঘু উন্নয়নের ইস্য়ুকে অস্ত্র করেই মমতাকে করলেন শুভেন্দু।


এতদিন যে বিজেপি-র বিরুদ্ধে তৃণমূল বার বার বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ করে এসেছে তৃণমূল, বৃহস্পতিবার সেই বিজেপি-ই সংখ্যালঘু উন্নয়ন, তাঁদের বাসস্থান এবং কর্মসংস্থান নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করল। আর তাদের হয়ে নিজের পুরনো দলকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করলেন শুভেন্দু। 


আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari:'আগে বাংলার ভোটে ইভিএম-এর সঙ্গে ভিভিপ্যাট লাগিয়ে সততা প্রমাণ করুন', মমতাকে পাল্টা শুভেন্দুর


এদিন শুভেন্দু বলেন, "৫০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক, তার ৩২ লক্ষ মুসলমান। কাজ দিতে পারেন না, স্বাস্থ্য দিতে পারেননি, শিক্ষা দিতে পারেননি। আপনি আবার ভোটের জন্য, ধর্মীয় প্রচার করার জন্য, বিভাজনের রাজনীতি করার জন্য, এর আগে সিএএ নিয়ে মিথ্যা প্রচার করে, এনআরসি নিয়ে করে, ভোট নিয়েছেন। আবার এই ২১ তারিখে ইমাম সাহেব-মোয়াজ্জেম সাহেবদের ববি হাকিমকে দিয়ে ডাকাচ্ছেন। আবার পশ্চিমবাংলায় বিভাজনের রাজনীতিটা করতে। আমরা এই বিভাজনের রাজনীতির বিরোধিতা করি। আমরা চাই আপনার এই তোষণ বন্ধ হোক।"


শুভেন্দু আরও বলেন, "এবার আপনি ভোটের রাজনীতি শুরু করেছেন। সংখ্যালঘু, মুসলিম ভোট আপনাকে গোছাতে হবে। কারণ, বালিগঞ্জে একটু ভেঙে গিয়েছে। অল্প একটু। সাগরদিঘিতে ফাটলটা ভালই চওড়া হয়েছে। তার পরে ভাঙড়ে লোক দেখেছে, ভোট দিতে পারলে আপনি নেই। আমরা জানি, এই আনপ্রেডিক্টেবল চিফ মিনিস্টার, এখন সংখ্যালঘু ভোটকে ফেরানোর জন্য, হয়তো ইমাম ভাতা, ২ থেকে ৩ হাজার করে দিতেও পারে। মোয়াজ্জেম ভাতা হাজার টাকাকে ১২০০ টাকা করে দিতেও পারে। ভোট বড় বালাই। আর ২০০-৫০০ অভ্যাসের মতো পরিণত হয়েছে।"

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলার ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে, ১৩০টি কেন্দ্র এমন রয়েছে, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ২৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৭৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোটারের হার ৪০ শতাংশ বা তার বেশি। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে ওই ৭৪টি আসনের মধ্যে ৭১টিই যায় তৃণমূলের দখলে। বিজেপি-র ঝুলিতে যায় মাত্র দু'টি আসন। আইএসএফ জয়ী হয় একটি আসনে।


যদিও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ভাঙড়ের পর, সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের পরাজয়ের পরে প্রশ্ন উঠেছিল, তবে কি সংখ্যালঘুদের মধ্যে শাসকদলের একচ্ছত্র আধিপত্য ধীরে ধীরে খর্ব হচ্ছে? কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, এবার পঞ্চায়েত ভোটে, উত্তর দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, দুই ২৪ পরগনা কিম্বা নদিয়ার মতো জেলার, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় অধিকাংশ আসনই গিয়েছে তৃণমূলের দখলে। ভাঙড়ের ছবিটাও তৃণমূলের পক্ষে ভালই। কোথাও কোথাও আগের চেয়ে তুলনামূলক ভাল ফল হয়েছে বাম-কংগ্রেসের। এই প্রেক্ষাপটেই কৌশলে সংখ্যালঘু ভোট এবং তোষণের রাজনীতি নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধলেন শুভেন্দু।  


আগামী ২১ অগাস্ট নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মোয়াজ্জেমদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেল। সেখানে বক্তব্য রাখবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সমাবেশ থেকে তৃণমূলনেত্রী কী বার্তা দেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।