সত্যজিৎ বৈদ্য ও অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : অবশেষে ভাঙল প্রতিরোধ। ২০১৪ টেট উত্তীর্ণদের পাঁজাকোলা করে, টেনবে-হিঁচড়ে সরিয়ে দিল পুলিশ (Police)। তিনটি বাসে ঠাসাঠাসি করে তুলে চাকরিপ্রার্থীদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হল থানায়। ঘণ্টা ছয়েক নরমে-গরমে হুঁশিয়ারির পর্ব চলেছে। শেষমেশ বলপ্রয়োগ করে অনশন-আন্দোলন ভেঙে দিল পুলিশ। পাঁজাকোলা অবস্থায় পুলিশের গাড়িতে ওঠার পথে রাজ্য সরকারের উদ্দেশে কড়া সুরেই আক্রমণ শানালেন আন্দোলনকারীরা।

'আমরা কি চোর ?'

'আমরা কি চোর?', 'শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার মাঝে রাতের অন্ধকারে পুলিশ কেন তুলে দিল?'-র মতো প্রশ্নের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন মহিলা হওয়া সত্বেও কীভাবে রাতের অন্ধকারে মহিলা চাকরিপ্রার্থীদের এভাবে জোর করে তুলে দেওয়া হয়, সেই প্রশ্নও তুললেন আন্দোলনকারীরা। রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়ে রাজ্য সরকারকে তীব্র ব্যঙ্গের সুরে কেউ কেউ বললেন, 'আমাদের ন্যায্য চাকরি ঘুষের টাকায় বিক্রি করে দিয়ে পুলিশ দিয়ে জোর করে মধ্যরাতে তুলে দিচ্ছে আমাদের।'

সন্ধে থেকেই প্রস্তুতি পুলিশের

সন্ধে সাড়ে ছটা নাগাদ থেকে পুলিশ মাইকে আন্দোলনকারীদের এলাকা ফাঁকা করে দিতে বলতে শুরু করে। যদিও আন্দোলনকারীরা তাঁদের অবস্থানে ছিলেন অনড়। 'পুলিশ মারলে মার খাবেন' বলেই দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকার পর কৌশল বদলে ছোট ছোট দলে ভাগ করে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন তাঁরা। সহানুভূতির সঙ্গে গোটা পরিস্থিতি সামলালেও মধ্যরাতে কার্যত পুলিশ জোর করেই তুলে দিল আন্দোলন। তার আগে সন্ধে থেকেই বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘিরে ফেলে গোটা করুণাময়ী চত্বর। আন্দোলনকারীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিয়ে আসা হয় বাস।

 যে সময় আন্দোলন প্রত্যাহার হবে কি না জানতে চাইলে ১৪-র টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের বলেছিলেন, 'মারতে এল মার খাব। হয় পুলিশের মারে মরব, নয়তো না খেয়ে। তবে নিজেদের দাবি থেকে আমরা একচুলও নড়ব না। চাকরি না পেয়ে আমরা এক চুলও নড়ব না।' অপর এক চাকরিপ্রার্থীর কথায়, 'এতদিন ধরে ন্যায্য চাকরি পাওয়ার জন্য কিছু করতেই তো বাকি রাখিনি আমরা। সবটা দিয়ে লড়াই করার পরও সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে দেখেই তো এই চূড়ান্ত পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছি।'

হাইকোর্টের নির্দেশ

প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কর্মীদের অফিসে ঢোকা-বেরোনো নিশ্চিত করতে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)। গাড়ি নিয়ে পর্ষদের অফিস পর্যন্ত যাওয়ার আবেদনে অবশ্য হস্তক্ষেপ করল না হাইকোর্ট। তবে হাইকোর্ট জানিয়ে দিল ‘বহাল থাকা ১৪৪ ধারা কার্যকর করতে পদক্ষেপ নিতে পারবে পুলিশ (Police) ’, ৪ নভেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে অন্তর্বর্তী নির্দেশ। 

আরও পড়ুন- ‘জোর করে কৃষকদের জমি কেড়েছেন, তাপসী মালিককে পুড়িয়ে মেরেছেন’ সিঙ্গুর নিয়ে ফের চড়া সুর মমতার