সৌভিক মজুমদার, কলকাতা : সর্বোচ্চ আদালত ( Supreme Court ) প্রথমে চাকরি বাতিলে স্থগিতাদেশ দিলেও, বিচারপতি মামলা পাঠিয়েছিলেন হাইকোর্টে ( Kolkata High Court )! কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল না! প্রাথমিকে ১৪০ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্তে অনড় থাকল আদালত। এমনকি তাঁদের বেতন বন্ধের নির্দেশও বহাল রাখলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ( Abhijit Ganguly ) ।  


টেটে ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ


২০১৪’র প্রাথমিকে টেটে ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বেআইনিভাবে বাড়তি এক নম্বর করে দেওয়ার পাশাপাশি ফেল করে, এমনকি পরীক্ষা না দিয়ে, ২৬৯ জন প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন বলেও অভিযোগ সামনে আসে।  গত বছরের ১৩ জুন, সেই ২৬৯ জন প্রাথমিক শিক্ষককে বরখাস্ত ও বেতন বন্ধের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।   

সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন মামলাকারীরা


এরপর বরখাস্ত হওয়াদের একাংশ সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেন।কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই সিলমোহর দেয়। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন মামলাকারীরা। ২০২২-এর ১৮ অক্টোবর, সর্বোচ্চ আদালত ২৬৯ জনের চাকরি বাতিলের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, কলকাতা হাইকোর্ট ২৬৯ জনকে মামলায় যুক্ত করবে। 


মোট ১৯৩ জন প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল


এরই মধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশে, চাকরি ফিরে পান একজন। ফলে ২৬৯ থেকে সংখ্যাটা কমে দাঁড়ায় ২৬৮। এই পরিস্থিতিতে গত ২৩ ডিসেম্বর, ৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ বহাল রাখেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আর বুধবার আরও ১৪০ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিলেন তিনি। এ নিয়ে মোট ১৯৩ জন প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল হল। 


অন্যদিকে অপর একটি মামলায় SSC-র নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকা এবং আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে তিনি যুক্ত কিনা, তা খুঁজে দেখার জন্য সিবিআইকে নির্দেশ দিল হাইকোর্ট।  গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ভূমিকা ছিল কল্যাণময়ের। 

গ্রেফতারের পর থেকে সিবিআই হেফাজত ও জেল হেফাজতে রয়েছেন তিনি। এই প্রেক্ষাপটে জামিনের আবেদন করেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি। বুধবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তর বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের আইনজীবী বলেন, ১১৩ দিন ধরে জেলে রয়েছেন। চার্জশিটও দাখিল হয়ে গেছে। এবার কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে জামিন দেওয়া হোক। 
পাল্টা সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, তদন্তের সময় বেনিয়ম পাওয়া গেছে বলে গ্রেফতার করা হয়েছে কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে। তিনি শান্তিপ্রসাদ সিনহার সঙ্গে চক্রান্তে যুক্ত ছিলেন। শান্তিপ্রসাদের থেকে সুপারিশপত্র নিয়ে নিজেই সরাসরি নিয়োগপত্র দিতেন তিনি। এমনকি প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। 
সেইসময় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী সিবিআইকে নিয়োগ দুর্নীতিতে আর্থিক লেনদেন খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন।