বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: নন্দীগ্রামের কেন্দামারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের নতুন বুথ কমিটি ঘিরে প্রকাশ্যে এল শাসকদলের কোন্দল। নতুন বুথ কমিটিতে দলবদলকারীরা প্রাধান্য পেয়েছে, এমন দাবি তুলে ব্লক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ ওই গ্রাম পঞ্চায়েতেরই তৃণমূল সদস্য শেখ সাহাবুদ্দিনের। আর এই একই ইস্যুতে তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে পদ্মশিবিরও।


২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর নন্দীগ্রামে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছিল ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। সরিয়ে দেওয়া হয় গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক প্রধান, উপপ্রধানকে। এমনকী একই সঙ্গে দলের নির্দেশে নন্দীগ্রামের ১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষরাও পদত্যাগ করেন। এবার নন্দীগ্রাম জুড়ে শুরু হল বুথ থেকে ব্লকস্তর পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটিতে রদবদল। গত ১৬ অগাস্ট তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে সেই জেলায় নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কাজের সুবিধার জন্য পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দুটি লোকসভার ভিত্তিতে, তমলুক ও কাঁথিতে দুটি সাংগঠনিক জেলা গড়ে তোলা হয়েছে। তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়েছে হলদিয়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডলকে। অন্যদিকে কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হয়েছেন এগরার তৃণমূল বিধায়ক তরুণ মাইতি। এই অবস্থায় মঙ্গলবার নন্দীগ্রামের কেন্দামারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ২১২ ও ২১৩ নং বুথে নতুন করে বুথ কমিটি গঠন করলেন নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বদেশ দাস।


এই নতুন বুথ কমিটির গঠন নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন আবু তাহের অনুগামী  ওই গ্রাম পঞ্চায়েতেরই প্রধান মানসুরা বেগমের স্বামী তথা একই গ্রাম পঞ্চায়েতের  তৃণমূল সদস্য শেখ সাহাবুদ্দিন। ২১২ নং বুথের সভাপতি ছিলেন সাহাবুদ্দিনের নিজের ভাই জাহাঙ্গীর আলম। তাঁকে সরিয়ে সভাপতি করা হয়েছে শেখ নজরুলকে। আর এবারেই গড়ে ওঠা নতুন বুথ ২১৩ নং-এর সভাপতি করা হয়েছে নাসির আহমেদকে। এই সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন শেখ সাহাবুদ্দিন। তাঁর বক্তব্য, এই বিধানসভা ভোটে নবনির্বাচিত ২১৩ নং-এর বুথ সভাপতি নাসির আহমেদ সিপিএমের হয়ে প্রচার করেছিল, আর তার বাড়িতেই নতুন বুথ কমিটির সভা করা হল। পাশাপাশি নাম না করে ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বদেশ দাসকে খোঁচা দিয়ে সাহাবুদ্দিন বলেছেন, 'দলনেত্রী কীভাবে হারলেন তার পর্যালোচনা না করে কেউ কেউ বুথ অঞ্চল কমিটি গঠন করছেন। তাও আবার দলীয় নির্দেশকে উপেক্ষা করেই।' যদিও শেখ সাহাবুদ্দিনের সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে পাল্টা জবাব দিয়েছেন স্বদেশ দাসও। আর তৃণমূলের অন্দরের এই কোন্দল প্রকাশ্যে আসতেই তা নিয়ে খোঁচা দিয়েছে বিজেপিও। 


বলাই বাহুল্য নন্দীগ্রামে শাসক দলের এই দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পর আবু তাহের বনাম স্বদেশ দাস বারবার চোখে পড়েছে। বজ্রাঘাতে মৃত সোনাচূড়ার দুই যুবকের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোই হোক বা আলাদা আলাদা 'খেলা দিবস' আয়োজন, দুই শিবিরকে দেখা গেছে পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করতে। তারপর কেন্দামারি এলাকায় নতুন এই বুথ কমিটি ঘিরে দুই শিবিরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে ঘাসফুল শিবির। এখন রাজনৈতিক মহলের একটাই প্রশ্ন, নতুন জেলা কমিটি কি পারবে এই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে?