তিলজলা: স্ত্রীর গর্ভপাতের পরে তান্ত্রিকের শরণাপন্ন হন অভিযুক্ত, তার নির্দেশেই খুন।  তিলজলাকাণ্ডে ধৃতকে জেরার পরে এমনই দাবি পুলিশের। জেরায় ধৃত আরও জানিয়েছেন, 'স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত। মাথায় হাতুড়ির আঘাতের পরে পাটের দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন। খুনের পরে তান্ত্রিকের কাছে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা'। কিন্তু কে সেই তান্ত্রিক, যার নির্দেশে শিশুকন্যাকে নৃশংস খুন? খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর  প্রথমবার ফ্ল্যাটে মেলেনি কিছুই, দ্বিতীয়বার তল্লাশিতে দেহ উদ্ধার হয়। 


খুনের কথা কবুল: পুলিশের দাবি তিলজলাকাণ্ডে ৭ বছরের শিশুকন্যাকে যৌন নির্যাতনের পর, খুনের কথা কবুল করেছে অভিযুক্ত । ধৃত অলক সাউয়ের বিরুদ্ধে অপহরণ, খুন ছাড়াও পকসো আইনে মামলা রুজু হয়েছে। অন্যদিকে, গতকাল তিলজলা থানায় ইটবৃষ্টির ঘটনায় একজন ASI ও ৪ জন কনস্টেবল আহত হন। নাবালিকাকে অপহরণ-খুন, অভিযুক্তকে মারধর ও থানা ভাঙচুরকাণ্ডে ৩টি পৃথক মামলা রুজু হয়। মূল অভিযুক্ত ছাড়াও, থানা ভাঙচুরের অভিযোগে আরও ২ জনকে গ্রেফতার করেছে তিলজলা থানার পুলিশ। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। এদিকে, আজ থমথমে তিলজলা এলাকা। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে এখনও ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। 


তান্ত্রিকের নির্দেশেই খুন: তান্ত্রিকের নির্দেশেই খুন করা হয়েছিল তিলজলার শিশুকন্যাকে! পুলিশের দাবি  ধৃত অলক সাউকে জেরায় মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশসূত্রে খবর, সন্তান নেই, বেশ কয়েকবার স্ত্রী-র গর্ভপাত হয়, জেরায় এ কথা দাবি করে অলক। তান্ত্রিকের নির্দেশ মেনেই প্রতিবেশীর ৭ বছরের শিশুকন্যাকে অপহরণ করে খুনের পরিকল্পনা করে এরপর! ধৃতের দাবির সত্যতা যাচাই করে তান্ত্রিকের সন্ধান চালাবে তিলজলা থানার পুলিশ। 


অপহরণ করে শিশু খুনের প্রতিবাদে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল পার্কসার্কাস তিলজলা চত্বর। রবিবার রাতে থানায় তাণ্ডবের পর সোমবার রেল-পথ অবরোধ করলেন স্থানীয়রা। বাধা দিলে পুলিশের একের পর গাড়িতে আগুন, ইটবৃষ্টি। পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছুড়ল, লাঠিচার্জ করল পুলিশ।  


পুলিশের গাড়িতে উঠে দাপাদাপি, ভাঙচুর! গাড়ি, মোটরবাইকে আগুন!পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি! শিশুকন্য়া খুন ঘিরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এভাবেই অগ্নিগর্ভ রইল পার্ক সার্কাস-তিলজলা চত্ত্বর! প্রথমে কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকলেও, পরের দিকে বিক্ষোভ সামলাতে কাঁদানে গ্যাস, ইট ছুড়ল পুলিশ। রাস্তা থেকে শুরু করে রেল।  লাগাতার অবরোধের জেরে চরম হয়রান হতে হল সাধারণ মানুষকে!



খণ্ডযুদ্ধের মাঝে পড়ে প্রাণ ভয়ে পালাতে হল পথচারীদের রবিবার সকাল থেকে তিলজলা এলাকার বাসিন্দা ওই নাবালিকার খোঁজ মিলছিল না। নাবালিকারা যে আবাসনের বাসিন্দা, সেখানেই অন্য ফ্লোরের একটি বন্ধ ফ্ল্যাটে সন্ধেয় তাঁর মৃতদেহ মেলে। স্থানীয়দের দাবি, গ্যাসের সিলিন্ডারের পাশে রাখা একটি বস্তায় মুখ বাঁধা অবস্থায় মৃতদেহ পড়েছিল। 
এরপরই রাতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ঘিরে তুলকালাম শুরু হয় তিলজলা থানার সামনে। থানার বন্ধ গেট ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করেন স্থানীয়দের একাংশ। থানা লক্ষ্য করে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। পুলিশের প্রিজন ভ্যান, বাইক ভাঙচুর করা হয়। পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশ। 


এরই মধ্যে অভিযুক্ত অলক সাউকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, থানার বাইরে ভাঙচুরের ঘটনায় একজন ASI ও ৪ জন কনস্টেবল আহত হন। 
ভাঙচুরের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ২ জনকে। সোমবার সেই আঁচ এসে পড়ে বন্ডেল গেট এলাকায়। বেলা ১২টা নাগাদ অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি ও থানা ভাঙচুরকাণ্ডে ধৃত ২ মহিলাকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে পিকনিক গার্ডেন ও বন্ডেল রোডের সংযোগস্থলে বন্ডেল গেট অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘণ্টাদুয়েক পর থেকে শুরু হয় রেল অবরোধ করেন তাঁরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। শুরু হয় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি। 


ভাঙচুর চালানো হয় পুলিশের একের পর এক গাড়িতে, কিয়স্কে। লাগাতার ইটবৃষ্টির জেরে পিছু হটতে হয় দমকলের গাড়িকে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বাইকে, গাড়িতে। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় আকাশ। বিকেল ৪টে নাগাদ প্রত্যাঘাতে নেমে পড়ে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শুরু হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো। রেল অবরোধ তুলতেও তৎপর হয় পুলিশ। সাড়ে ৪ টে নাগাদ নামানো হয় raf। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে আতঙ্কে দোকান বন্ধ করে দেন এলাকার বহু ব্যবসায়ী।