কলকাতা: অলিখিত ভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের উত্তরাধিকার মনে করেন তৃণমূলের অনেকেই। এবার দলের নেতা কুণাল ঘোষ আরও বড় ঘোষণা করে দিলেন জন্মদিনের আগে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে অভিষেককে কার্যত পশ্চিমবঙ্গের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দিলেন তিনি। কুণালের বক্তব্য, "সময়ের নিয়মে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।" (Abhishek Banerjee)


রাত পোহালেই জন্মদিন অভিষেকের। তার আগে বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় আগাম শুভেচ্ছা জানান কুণাল। সেখানেই লেখেন, 'আমি নিজে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকি বা না থাকি, এই উদীয়মান তারকার উপর গুরুত্ব-সহ নজর রাখবই। বয়সে ছোট। কিন্তু আমি যতদিন তৃমমূলে থাকব, ও আমার নেতা। তার বাইরে স্নেহ করি, ভালবাসি। মমতাকে দীর্ঘকাল দেখেছি, এখন অভিষেককেও দেখছি। দ্রুত আরও পরিণত। আবেগের সঙ্গে মিশছে আধুনিক পদ্ধতি, প্রযুক্তি'। (Mamata Banerjee)


কুণার আরও লেখেন, 'আরও ধারাল হচ্ছে অভিষেক। সময়ের নিয়মে মমতাদির পর একদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হবে অভিষেক। তৃণমূল কংগ্রেসের সেনাপতি থেকে যুগান্তরের পতাকায় কাণ্ডারী। মমতাদির ঘরানার সময়োপযোগী ধারক ও বাহক। মমতাদির নেতৃত্ব চলতে থাকুক। আর তার মধ্যেই আগামীর পদধ্বনি হতে থাকুক বাংলার রাজনৈতিক সামাজিক চালচিত্রে'। অভিষেকের সুস্থতাও কামনা করেন কুণাল। কম বয়সে যোগ্য নেতৃত্বের যে ছাপ রাখছেন অভিষেক, তা আরও ব্যাপকতর হয়ে উঠুক বলে কামনা করেন। (Kunal Ghosh)






যদিও এ নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, "কুণাল ঘোষের বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারের বাইরে থেকে আর একটা সরকার চলছে। এই জন্যই পশ্চিমবঙ্গের এমন অবস্থা। যে দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করেছেন, তার উত্তরাধিকারী হিসেবে যিনি আসবেন...এটাই পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি। লালুপ্রসাদ, মুলায়ম সিংহের মতোই হবে। এটা কি বাংলার মানুষকে নতুন করে বোঝাতে হবে? কিন্তু সেই সুযোগ এবং সময় বোধহয় তৃণমূল আর পাবে না। তার আগেই বিসর্জন হয়ে যাবে।"


সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "কুণাল ঘোষ এসব বলতে পারেন। ওঁর হয়ত জানা আছে। সেসব নিয়ে আগ্রহ নেই আমার। দু'টো কারণ হতে পারে, এক হচ্ছে, পরিবারতন্ত্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরাধিকারী যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তা কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করেছেন? করেননি, করতে পারবেন না, যা ওঁদের অবস্থা সবমিলিয়ে। তাহলে শিন্ডের কথা বলতে হয়। শিবসেনাকে ভেঙে বিজেপি-র সমর্থন! আমি অনেক আগে বলেছিলাম, পশ্চিমবঙ্গে শিন্ডে তৈরি করার প্রক্রিয়া চলছে। তৃণমূলের মধ্যে থেকে কাউকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপি কি সেই চেষ্টা করছে? তেমনটা শোনা যায় কিন্তু। যদিও মানুষ তৃণমূল এবং বিজেপি-কে ভরসা করছেন না। তাই শিন্ডে প্রক্রিয়ার ইঙ্গি হয়ত দিয়ে রাখলেন কুণাল।"


প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, তৃণমূলে দিদি এবং খোকাবাবুর মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে। আস্তে আস্তে বিষয়টা সামনে আসছে। তৃণমূলে দু'টি গোষ্ঠী রয়েছে। বয়স্ক, যাঁরা দল তৈরির সময় থেকে রয়েছেন, তাঁরা দিদির পক্ষে। আর ভুঁইফোড় কিছু চোর ভদ্রলোক হতে চাইছেন, তাঁরা খোকাবাবুর দলে। তৃণমূলের এই দুই গোষ্ঠীর নানা দ্বন্দ্বের কথা আমরা জানি। আর জি কর নিয়ে দিদি একা ছিলেন, খোকাবাবু অনুপস্থিত ছিলেন। দিদি এখন তৃণমূলে বোঝা। মমতা এখন ওঁদের বোঝা হয়ে গিয়েছেন। সুযোগসন্ধানী হয়ে সেই জায়গা দখল করতে চাইছেন অভিষেক। কিন্তু বাংলার মানুষের মতামত ছাড়া কিছু হবে না।"