কলকাতা: আর জি কর কাণ্ডে দলের মধ্যে অন্তর্ঘাত দেখছেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাপে ফেলতে দলের একাংশই বিশ্বাসঘাতকতা করছে বলে অভিযোগ মদনের। তাঁর বক্তব্য, "রামায়ণে একটি বিভীষণ ছিল, এখানে অনেকগুলি। একটাকে দেখালে, বাকিগুলি চালাকি করে মুখ লুকিয়ে ফেলবে।" দলের অন্দরে এই বিভীষণদের চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে,ফাইল তৈরি হচ্ছে বলে জানান মদন। (Madan Mitra)


কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় উত্তাল গোটা দেশ। সাধারণ মানুষ, বিরোধীরা যেমন রাস্তায় নেমেছেন, তেমনই দলের অন্দর থেকেও বিদ্রোহের সুর শোনা যাচ্ছে। রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় সরাসরি কমিশনার বিনীত গোয়েলকে হেফজতে নেওয়ার দাবি তুলেছেন। পাশাপাশি, আন্দোলনেও সমর্থন জানিয়েছেন। চাপে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট তুলে নিলেও, নিজের অবস্থানে অনড় বলে জানিয়েছেন সুখেন্দুশেখর। (RG Kar Doctor Death Case)


সেই আবহেই দলে অন্তর্ঘাতের প্রশ্ন উস্কে দিলেন মদন। এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মদন বলেন, "দুর্ভাগ্যের বিষয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা ঘটনার মাহাত্ম্য এবং গুরুত্ব বুঝে কাজ করতে চাইছেন। সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন উনি। কিন্তু আমাদের দলের কিছু লোক, যাঁরা ক্ষমতার জন্য প্রতি মুহূর্তে ঠুকরে ঠুকরে খায়, বিভীষণ, বেইমান। তাঁরা চেষ্টা করছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপদ এসেছে, এই সময় ছোবল মারা যাক।"


দলের অন্দরে মমতার একাধিপত্য, দেশের সর্বত্র যেভাবে মমতার জনপ্রিয়তা বাড়ছে, সেটাও অনেকের সহ্য হচ্ছে না বলে দাবি মদনের। তাঁর কথায়, "এই জায়গাটা অনেকের সহ্য হচ্ছে না, হিংসে হচ্ছে। অথচ সিপিএম-বিজেপি-কে হারানোর ক্ষমতা নেই ওঁদের। এই যে মিছিল হচ্ছে জনজাগরণের, তাতে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস রয়েছে। তৃণমূলের অনেকেও গিয়েছেন। ডাক্তারদের আন্দোলন অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত। একটা মেয়ে মারা গিয়েছেন, আমার মেয়ে বা বোন হলে, আমি কী করতাম? কিন্তু ডাক্তারদের দরজায় আগল দিয়ে আন্দোলন করতে হবে। বেহুলা-লখিন্দরের তো আগলের ফাঁক দিয়ে কাল-কেউটে বা গোখরো ঢুকে না পড়ে। সেগুলি কিন্তু ঢুকে পড়ছে।"


বাইরের লোকজন তো বটেই, দলের মধ্যে থেকেও কেউ কেউ মমতাকে ছোবল মারার চেষ্টা করছেন বলে দাবি মদনের। তাঁর কথায়, "দলের মধ্যে একটা শ্রেণি...জলে নামিব, সাঁতারও কাটিব, কিন্তু জল ছোঁব না। আমি ট্যুইটও করিব, পাবলিসিটি নেব, কিন্তু ট্যুইট রেখে দেব না। ডিলিট করব না। আমি মদন মিত্র, আমি এসব করি না। ট্যুইট করিও না, ডিলিটও করি না।"


মদনের দাবি, মমতার ক্ষমতায় ঈর্ষাণ্বিত হয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। কখনও শরীর খারাপের দোহাই দিচ্ছেন, কখনও বলছেন, বয়স হয়েছে, হুইল চেয়ার লাগবে। কিন্তু বয়সের দোহাই দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরাতে গেলে বলছেন, কিচ্ছু হয়নি, চাঙ্গা রয়েছেন। মতনের বক্তব্য, "শীঘ্রই এই বিভীষণদের শনাক্তকরণের কাজ হয়ে যাবে। রামায়ণে একটা বিভীষণ ছিল, যে পিছনের রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিল। এখানে অনেক বিভীষণ রয়েছে। একটাকে দেখালে, বাকিরা চালাকি করে মুখ লুকিয়ে ফেলবে। ফাইল রেডি হচ্ছে।"


মদনের দাবি, সুবিধেবাদীরা ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন। একদিকে, সঙ্গে আছি বলে ক্ষমতা ভোগ করছেন। আবার, বিরোধীদের সঙ্গে তলায় তলায় রাতের অন্ধকারে বন্ধুত্ব রাখছেন, যাতে পাল্টা মার এলে নন্দলালের মতো নিজেরটুকু গুছিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু মমতাই আসল বলে জানিয়েছেন মদন। মদনের বক্তব্য, "এঁরা ইঁদুর। জাহাজ ডুবছে মনে হলে সবার আগে ইঁদুরগুলি লাফ দিয়ে পালায়। সেরকম কিছু ইঁদুর আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি রণংদেহি মূর্তিতে রাস্তায় নামেন, এই ইঁদুরগুলি পালিয়ে যাবে, খুঁজে পাওয়া যাবে না।"