কলকাতা: সন্দেশখালির ঘটনায় (Sandeshkhali Incident) এবার সংবাদমাধ্য়মকেই কাঠগড়ায় তুললেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় (Sougata Roy)। শেখ শাহজাহান ও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক ভয়াবহ অভিযোগ ঘিরে তেতে গোটা সন্দেশখালি (Sandeshkhali Chaos)। শেখ শাহজাহানের (Sheikh Shajahan) বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়ে ইডির আধিকারিক ও সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনার পরেও ৫২ দিন ধরে অধরা শাহজাহান। এদিকে তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখল, গণধর্ষণ, মারধর, ভয় দেখানোর মতো একাধিক অভিযোগের পাহাড় রয়েছে সন্দেশখালিতে। রাস্তায় নেমে ঝাঁটা, লাঠি হাতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সন্দেশখালিতে অশান্তির ঘটনায় সংবাদমাধ্যমকেই নিশানা করেছেন সৌগত রায় (Saugata Roy on Media)। লাগাতার খবর করার জন্য় সংবাদমাধ্যমকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন বর্ষীয়ান সাংসদ। সন্দেশখালির পরিস্থিতি নিয়ে লাগাতার খবর করায় শাসকের রোষে সংবাদমাধ্যম। এর আগে সংবাদ পরিবেশনের সময়েই সন্দেশখালি থেকে সাংবাদিক সন্তু পানকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। নিম্ন আদালত জামিন না দিলেও পরে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন সন্তু পান।
ভেড়ির জন্য গায়ের জোরে জমি দখল। চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দেওয়া। গরিব গ্রামবাসীদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা। নারী নির্যাতনের মতো একের পর এক গুরুতর অভিযোগে ফুঁসছে সন্দেশখালি। শেখ শাহজাহান, সিরাজউদ্দিন, শিবু হাজরা, উত্তর সর্দার, অজিত মাইতিদের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন মহিলারা। উঠছে গ্রেফতারের দাবি। ইতিমধ্যেই শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে অজিত মাইতিকে , শেখ সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ।
সন্দেশখালির এখন এমন পরিস্থিতি যে প্রায় প্রতিদিন সেখানে যেতে হচ্ছে রাজ্যের মন্ত্রীদের। সন্দেশখালিতে এসে ভুল শিকার করতে হয়েছে খোদ রাজ্য পুলিশের ডিজিকে। তিনি বলেছেন, 'ভুল হয়েছে। ভুল, মানছি তো এটা। আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করব। আমরা সবাই যারা আছি, আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।'
অভিযোগ উঠেছে, বহিরাগত উস্কানিরও। মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় নিজে বলেছেন, 'বাইরে থেকে নিয়ে এসে একটা এলাকাকে অশান্ত করার চেষ্টা করেছে।' এই মন্তব্য়ে তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেছেন সন্দেশখালির একাধিক বাসিন্দা। এই পরিস্থিতিতেই সন্দেশখালিতে অশান্তির ঘটনায় সংবাদমাধ্যমকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তৃণমূলেরই বর্ষীয়ান সাংসদ।
রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, 'মানুষের আন্দোলন তো...মানুষের অভাব-অভিযোগ এই সব কেন্দ্র করে মানুষের অভাব-অভিযোগকে মান্যতা দেন আমাদের বাংলার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়।' রাজ্যের মন্ত্রী যখন এই কথা বলছেন, তখন কী বললেন তাঁর দলেরই দীর্ঘদিনের সাংসদ সৌগত রায়? বললেন, 'আমি সন্দেশখালি নিয়ে যা হচ্ছে সেটা, সংবাদমাধ্যম তৈরি করছে! আমি আর তাতে যোগ দিতে চাই না!' যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, পুরোটাই সংবাদমাধ্য়মের তৈরি কিনা, তখন সৌগত রায় বলেন, 'অনেকটাই।' পাল্টা সন্দেশখালির মানুষের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করতেই সাংসদ সৌগত রায় বলেন, 'আর এত প্রশ্ন করলে তো হবে না। তোমায় আমি একটাও প্রশ্ন করার অনুমতি দিইনি।'
বিষয়টি নিয়ে খোঁচা দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, 'এরা সব সাংসদ! তাহলে এখানে নাটক করা হচ্ছে! ঘরের টাকা, ১০০ দিনের কাজের টাকা, এরা ক'বার ওখানে গিয়ে কথা বলেছে? সন্দেশখালিতে সবাই সন্দেশ দিতে আরম্ভ করে দিয়েছে। যখন দুর্নীতিতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, এই দুর্নীতিগ্রস্তদের কথা বলার কোনও অধিকার নেই।'
তৃণমূল সাংসদের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা। তখনই সাংসদেরই পাশে দাঁড়িয়েছেন দলের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। তাঁর দাবি, 'এক শ্রেণির মিডিয়া কুৎসিতভাবে একটা রাজনৈতিক পার্টির স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য খবর করেছে। আমাদের সাংসদ সেই হিসাবেই, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই কথাগুলো বলেছেন।'
লোকসভা ভোটের আগে শাসকদল যখন সন্দেশখালির ড্যামেজ কন্ট্রোলে সচেষ্ট, ঠিক তখন নতুন তত্ত্ব খাড়া করে, সংবাদমাধ্যমের ওপর দায় ঠেলে, নতুন বিতর্ক বাধালেন তৃণমূলেরই সাংসদ সৌগত রায়।
আরও পড়ুন: ১০০ অভিযোগ, শাহজাহানের ভাই সিরাজুদ্দিনের বিরুদ্ধে FIR পুলিশের