কলকাতা: রাজ্য রাজনীতিতে তো বটেই, দলের অন্দরেও তাঁকে নিয়ে নানা জনের নানা মত রয়েছে। লোকসভা নির্বাচন ঘিরে বাংলার রাজনীতি যখন সরগরম, সেই সময় আবারও চর্চায় উঠে এলেন কুণাল ঘোষ। বুধবার দুপুরে আচমকাই তাঁকে রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেয় তৃণমূল, দলের সেই সিদ্ধান্তে তিনিও আশ্চর্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কুণাল। রাজ্যের বিরোধী দলের নেতারাও কুণালের অপসারণ নিয়ে মুখ খুলেছেন। (TMC Removes Kunal Ghosh)


বুধবার সকালে সদ্য-তৃণমূলত্যাগী তাপস রায়ের সঙ্গে একমঞ্চে দেখা যায় কুণালকে। সেখানে তাপসের ভূয়সী প্রশংসাও শোনা যায় তাঁর মুখে। এর পরই কুণালকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে শোনা যায়। সেই তাপস গোটা ঘটনায় মুখ খুলেছেন। সৌজন্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। তাপসের কথায়, "এটা ওদের অন্তর্দলীয় বিষয়। কিন্তু তার মানে কি তৃণমূলে সৌজন্য বা গণতন্ত্রের কোনও জায়গা নেই? এর পর বিয়েবাড়ি, সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগেও কি ওরা তালিকা দেখে যাবে? দু'মাস যখন জেল খাটছে ছেলেটা (কুণাল), সেই সময় প্রতিদিন বাডিতে বসে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসত, মজা নিত সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়। নিশ্চয়ই সেটা ও ভুলে যায়নি! কত জনকে শোকজ করবে, কতজনকে সাসপেন্ড করবে! সুদীপকে আড়াল করতে গিয়ে উত্তর কলকাতায় দলটার কী অবস্থা, তা কারও অজানা নয়।" (Kunal Ghosh Reactions)


বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, "দেব কেন মিঠুনের সঙ্গে কথা বলেছেন, প্রশংসা করেছেন, সেদিন প্রশ্ন তুলছিলেন কুণালবাবু। আজ আর তাঁর উপরও কোপ নামল! রোজই কেউ না কেউ পার্টি বদলায়। তার সঙ্গে বসে কথা বললে তাড়িয়ে দেবে? তৃণমূলের মতো দলকে নিষিদ্ধ করা উচিত, নইলে এই অমানবিকতা বন্ধ হবে না।"


বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কথায়, "তৃণমূল রাজনৈতিক ভাবে কতটা অসহিষ্ণু, এই ঘটনা তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে দুই দলের লোকজনই ছিলেন। সেখানে একজনের প্রশংসা করলে যদি সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে দেবও তো আমার এলাকায় গিয়ে আমার প্রশংসা করেছে! রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার চরম নিদর্শন এটি।"


আরও পড়ুন: Kunal Ghosh: ‘দেবের মিঠুনস্তুতি দোষ নয়, আমার বেলাতেই অগ্নিপরীক্ষা!’ অপসারিত হয়ে তৃণমূলকে প্রশ্ন কুণালের


তমলুকে বিজেপি প্রার্থী করেছেন যাঁকে, সেই প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "কুণাল ঘোষ আমার বিশেষ পরিচিত। মানুষটিকে যত খারাপ বলে প্রচার করা হয়, ততটাও খারাপ নন উনি। তৃণমূলে আছেন বটে, আমাকে আক্রমণও করেন, কিন্তু আমার বন্ধু উনি। একজনের সঙ্গে মঞ্চে উঠেছেন বলে একজনকে সরিয়ে দেওয়া হবে! এই দলে কোনও গণতন্ত্র নেই। পিসি-ভাইপো একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছেন।"


সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "কুণাল ঘোষ রক্তদান শিবিরে বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বলে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আচ্ছা, অনুব্রত মণ্ডলকে কি পদ থেকে সরানো হয়েছিল? বড় অপরাধীদের বেশি কদর তৃণমূলে। তাই অনুব্রত, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের সরানো হয় না।"


বিজেপি কাউন্সিল সজল ঘোষের কথায়, "ওদের দলের পাঁঠা,ঘাড়ে কাটবে না লেজে, তা ওরা সিদ্ধান্ত নেবে। বলি দেবেন না, কুরবানি করবে, ওরা ঠিক করবে। আমরা কী করব? একটা সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে। তৃণমূল কী বলতে চায়, সামাজিক অনুষ্ঠানও রাজনৈতিক রংয়ে, ঢংয়ে হবে?"


তৃণমূলের তরুণ নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য যদিও বলেন, "দলের সিদ্ধান্ত সকলকে মেনে নিতে হবে। দল যদি মনে করে পদক্ষেপের প্রয়োজন আছে, সেই স্বাধীনতা আছে দলের।" যে সুদীপের নাম বার বার এই ঘটনায় উঠে এসেছে, তিনি যদিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলবেন না বলে জানান তিনি।