বিজেন্দ্র সিংহ, অনির্বাণ বিশ্বাস ও রঞ্জিত হালদার: কলকাতায় যেদিন তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির মেগা বৈঠক হল, সেদিন থেকেই শুরু হল সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। আর অধিবেশনের শুরুতেই জাতীয় রাজনীতিতে ইঙ্গিতপূর্ণ ছবি চোখে পড়ল। I.N.D.I.A জোটের বৈঠকে সেখানে দেখা গেল না তৃণমূলকে। তাই প্রশ্ন উঠছে, ফের একবার কি কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব তৈরি করতে শুরু করল তৃণমূল? নেপথ্য়ে কি বিশেষ রাজনৈতিক সমীকরণ? মহারাষ্ট্রে বিপর্যয়ের পর কি কংগ্রেসের ওপর চাপ তৈরির কৌশল নিলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়? (Mamata Banerjee)

সোমবার সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে বাসভবনে বিরোধী দলগুলির বৈঠক ডাকেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে। আদানি ঘুষকাণ্ড-সহ বিভিন্ন ইস্য়ুতে কীভাবে সংসদের অন্দরে নরেন্দ্র মোদির সরকারকে চেপে ধরা হবে, তা নিয়ে কৌশল স্থির করার জন্য়ই এই বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে কংগ্রেস ছাড়াও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি, সদ্য় মহারাষ্ট্রে পরাজিত দুই জোটসঙ্গী শরদ পাওয়ারের দল, উদ্ধব ঠাকরের দল, CPM, CPI, DMK-সহ ১৩টি বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। (I.N.D.I.A Bloc)

কিন্তু তৃণমূলের একাধিক সাংসদ দিল্লিতে থাকা সত্ত্বেও, কংগ্রেসের ডাকে মোদি-বিরোধী রণকৌশল স্থির করতে বিরোধীদের এই বৈঠকে গরহাজির ছিলেন তাঁরা। সেই নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, "মানুষের দু'টো হাত হয়, বাম এবং ডান। তৃণমূলের তৃতীয় হাত হল অজুহাত। বিজেপি, আদানির বিরুদ্ধে বিরোধীদের মধ্য়ে ঐক্য রয়েছে, সেই ঐক্যের বিরোধিতা করতে হবে। ঐক্যের বিরোধিতার যে দাদন, সেটা তৃণমূল নিয়েছে। তাই বিরোধীদের মধ্যে বিভাজন ঘটাতে চাইছে। বিরোধীদের ভাগ করে দাও। তাহলে নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর দল বিজেপি, অমিত শাহরা বেশি খুশি হবেন। আর রিটার্ন গিফ্ট হিসেবে রাজ্যে যত দুর্নীতি, চুরি, লুঠপাটের তদন্তে ঢিল দেবে। শীতঘুমে চলে যাবে ED, CBI."


যদিও তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের যুক্তি, "আমাদের জাতীয় কর্মসমিতির বৈছক। মমতা জাতীয় স্তরের দিক নির্দেশ করবেন। সেগুলি বলে দেওয়া হবে। আদানি ইস্যুতে আমরাই তো সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছি। এতে স্ট্য়ান্ড ক্লিয়ার করা উচিত। কংগ্রেস ভাবুক মমতাকে মুখ করার জন্য। কারণ তাঁর ধারাবাহিক নির্বাচনী সাফল্যকে সামনে রেখে, তাঁর সামাজিক প্রকল্পের অনুকরণ অন্য রাজ্যেও জিতছে। কংগ্রেস তো ব্যর্থ!"


তৃণমূলের কেউ কেন I.N.D.I.A জোটের বৈঠকে গেলেন না, সেই নিয়ে জল্পনা আরও জোর পেয়েছে কারণ একদিন আগেই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি মমতাকে I.N.D.I.A জোটের মুখ করার দাবি তোলেন তিনি। বলেন, "গোটা দেশে কংগ্রেস যখন পিছিয়ে পড়ছে, অন্য রাজনৈতিক দলগুলি যখন পিছিয়ে পড়ছে, এমন পরিস্থিতিতে ইগো ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়া চলবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জোটের মুখ করে, ভারতের বুকে লড়াইটা করা উচিত। যাঁরা ব্যর্থ হচ্ছেন, ব্যর্থতা স্বীকার করতে হবে তাঁদের।"

I.N.D.I.A জোটের নেতৃত্ব নিয়ে তৃণমূল সাংসদের মন্তব্য়, জোটে ফাটলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেই নিয়ে রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "তৃণমূল কোনও সর্বভারতীয় দলই নয়। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কংগ্রেস মেনে নেবে? ভারতের অন্য রাজনৈতিক দল মেনে কি মেনে নেবে, যারা বিজেপি-র বিরোধী?" তবে এরই মধ্যে আবার ঝাড়খণ্ডে I.N.D.I.A জোটের শরিক হেমন্ত সরেনের শপথ অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন মমতা। ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে JMM ও কংগ্রেসের জোট। ৮১টি আসনের মধ্যে বিরোধী জোট পেয়েছে ৫৬টি আসন। তাই তৃণমূলের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।