কলকাতা: স্কুল শিক্ষা কমিশনে নিয়োগ দুর্নীতি ( SSC recruitment Scam) ঘিরে উত্তাল রাজ্য। দফায় দফায় সিবিআই-এর কাছে হাজিরা দিয়েছেন দুই মন্ত্রী। তা নিয়ে বিরোধীরা যখন চাঁচাছোলা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন, সেই সময় বিরোধীদের অবস্থান নিয়েই প্রশ্ন তুললেন তৃণমূল (TMC) মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য (Debangshu Bhattacharya)। আদালতে রায় ঘোষণার আগেই অভিযুক্তদের অপরাধী হিসেবে দাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন তিনি। জানিয়ে দিলেন, বাম (CPM), বিজেপি (BJP), কংগ্রেস, সব আমলেই দুর্নীতি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে কিনা, তাতেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।


বাম-বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ দেবাংশুর


শুক্রবার এবিপি আনন্দের ‘যুক্তিতক্কো’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন দেবাংশু।সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, রাজ্যে বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। তাঁদের সামনেই নিজের দলের হয়ে সওয়াল করেন দেবাংশু। ‘এসএসসি-র চাকরি বিক্রি হচ্ছে মোটা দামে, প্রশাসনের স্বচ্ছতা শুধুই কি নামে!’ অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু স্বরূপ এই ছত্রটি উদ্ধৃত করে দেবাংশু জানিয়ে দেন, প্রথম ছত্রে উল্লেখিত চাকরি বিক্রির বিষয়টি বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। আদালতের রায় না এলে, তার সত্য-মিথ্যা বোঝা সম্ভব নয়। তাই এ ব্যাপারে কিছু বলবেন না তিনি।  


কিন্তু  দ্বিতীয় ছত্রটি নিয়ে তীব্র আপত্তি জানান দেবাংশু। সাফ জানিয়ে দেন, এসএসসি একটি স্বশাসিত, সম্পূর্ণ আলাদা সংস্থা। সরকার বাইরে থেকে সাহায্য দিলেও, সিদ্ধান্তমূলক বিষয়ে নাক গলায় না। তাই এসএসসি-কে সরকারের সঙঅগে জুড়ে দেওয়া উচিত নয়। দেবাংশু বলেন, ‘‘এসএসসি টেটের সঙ্গে গোটা প্রশাসন এবং তার সিস্টেমক সম্পৃক্ত করে দেওয়া হল। যদিও আমরা সকলেই জানি, এসএসসি একটি স্বশাসিত সংস্থা। সরকারের থেকে আলাদা। পরীক্ষা, নিয়োগ, সবকিছু তারা নিজেরাই করে। তাতে ভাল হোক বা খারাপ, সবকিছুতে তাদেরই দায়বদ্ধতা রয়েছে। সরকারের সাহায্য থাকলেও, সরাসরি সে ভাবে জায়গা থাকে না।’’


আরও পড়ুন; SSC Recruitment Scam: হাইকোর্টে SSC মামলার এজলাস বদল, প্রাথমিক-মাদ্রাসায় সরলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়


এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত আটটি মামলায় এ যাবৎ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। গোয়েন্দা দফতরে দফায় দফায় হাজিরা দিয়েছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং পরেশ অধিকারী। বেআইনি নিয়োগে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থর ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মেধাতালিকা। নাম না থাকা মেয়েকে প্রভাব খাটিয়ে চাকরিতে নিয়োগের অভিযোগ বর্তমান শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে লাগাতার শাসকদলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে চলেছেন বিরোধীরা।


এ প্রসঙ্গে মাদককাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া বলিউড তারকা শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানের কথা টানেন দেবাংশু। তাঁর মতে, কর্ডেলিয়া জাহাজে শাহরুখপুত্র মাদকসমেত ধরা পড়েছিলেন বলে রব উঠেছিল। তাতে হামলে পড়েছিল সংবাদমাধ্যম থেকে বিরোধীরা। চারপাশে এমন হইহই রইরই চলছিল, আরিয়ান নির্দোষ না দোষী, কিছুই বলা যাচ্ছিল না। পরে জানা গেল,আরিয়ান মাদক নেননি। এনসিবি কর্তা সমীর ওয়াঙ্খেড়ে চক্রান্ত করে তাঁকে ফাঁসাতে চেয়েকরার আগে, বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা রেখে, অপেক্ষা কার উচিত।


এসএসসি নিয়ে বাম-বিজেপি, দুই পক্ষই তৃণমূলকে আক্রমণ করে আসছেন। ওই দুই দলকেই এক আসেন বসান দেবাংশু। তাঁর কথায় ‘‘এই হল বাম-রামের খেল। আসলের দুই দলের মধ্যে ব্যাস্তানুপাতিক সম্পর্ক। তাই ভোট হস্তান্তর হয়। এক জন উঠলে অন্য জন নামে, আবার অন্য জন উঠলে, এক জন ওঠে।’’ বাম জমানার দুই মুখ্যমন্ত্রীর নামও টেনে আনেন দেবাংশু। তিনি বলেন, “চোরদের মন্ত্রিসভায় থাকবেন না বলে জ্যোতিবাবুর সরকার থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দু’বছর ফিরে গিয়ে সেই দলেরই সম্রাট হয়ে বসলেন তিনি। তিনি কি তাহলে ভুল বলেছিলেন? সেই চোর কারা, কই খুঁজে দিলেন না তো বুদ্ধবাবু? বাংলার মানুষকেই শেষে চোর খুঁজে বার করে শূন্যে নামাতে হল।” বাম আমলে মেদিনীপুর থকে নিযুক্ত ২২০০ জনের  চাকরি খারিজ হয়েছিল বলেও জানান দেবাংশু। ত্রিপুরায় বাম আমলে ১০ হাজার ৩২৩ জনকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছিল, পরে বিজেপি ক্ষমতায় বসেও তা নিয়ে কিছু করেনি বলে দাবি করেন তিনি।


স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জন্য়ই মানুষ তৃমমূলকে ভোট দেন বলে মত দেবাংশুর


বাম এবং বিজেপি-র মধ্যে ফারাক বোঝাতে কাল এবং স্বচ্ছ কোল্ডড্রিঙ্কের তুলনা টানেন দেবাংশু। তাঁর মতে, এত অভিযোগ সত্ত্বেও বাংলার মানুষ বার বার তৃণমূলকে ভোট দিয়ে জেতাচ্ছেন, এর একটিই কারণ। কারণ তৃণমূল হল স্বচ্ছ কোল্ডড্রিঙ্কের মতো। ভিতরকার পোকা, নোংরা চোখে পড়ে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম-বিজেপি কালো কোল্ডড্রিঙ্কের মত হওয়ায়, সব লুকিয়ে থাকে। তাই স্বচ্চতার জন্যই বার বার তৃমমূলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় ফেরান বাংলার মানুষ। দেবাংশুর মতে, মমতাই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি প্রশাসনিক বৈঠকও ক্যামেরার সামনে করেন, যাতে গোটা দেশের মানুষ দেখতে পান। খারাপ-ভাল সব আলোচনা, বিতর্ক তাঁদের চোখের সামনে ঘটে। তাই মমতায় আস্থা রয়েছে সাধারণ মানুষের। একের পর এক মামলায় সিবিআই চায়া নিয়ে দেবাংশু জানান, দিল্লিতে সিবিআই-কে সরকারের হাতের পুতুল বলে উল্লেখ করে বামেরা। কিন্তু বাংলায় এসে সিবিআই দাবি করে। দেবাংসুর দাবি, তৃণমূলই বরং কিছুতে আপত্তি করেনি, শুধু আদালতের তত্ত্বাবধানে তদন্ত হওয়া উচিত বলে দাবি জানিয়েছিল।