রাণা দাস, পূর্ব বর্ধমান: তৃণমূলের দুই পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও টাকা তছরুপের অভিযোগ তুললেন তৃণমূলেরই বিধায়ক। পূর্ব বর্ধমানের দোগাছিয়া ও জাহাননগরের পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ। জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান পূর্বস্থলী উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। এরপরেই প্রকাশ্যে আসে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। 


'বিধায়কের অভিযোগ থেকেই স্পষ্ট যে পঞ্চায়েতে আসা মানুষের টাকা আসলে তৃণমূলের নেতাদের পকেটে ঢোকে,' অভিযোগ তুলে কটাক্ষ পদ্মশিবিরের। অন্যদিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতির বক্তব্য, 'দলের প্রধানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা আগে দলকে জানালেই ভাল হত।' জেলাশাসক জানিয়েছেন যে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।


দুর্নীতি ও টাকা তছরুপের অভিযোগের তির পূর্বস্থলীর দোগাছিয়া পঞ্চায়েত প্রধান ইলিজা খাতুন শেখ ও জাহাননগর পঞ্চায়েত প্রধান সাগর ঘোষের বিরুদ্ধে। অভিযোগ এনেছেনপূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ দোগাছিয়ার পঞ্চায়েত প্রধান ইলিজা খাতুন একশো দিনের কাজ না করিয়ে ভুয়ো মাস্টাররোল দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছেন। এছাড়াও ই-টেন্ডার না ডেকে নিজের পছন্দমত ব্যক্তিকে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া, ও বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জলের কল দেওয়ার নামে জোরপূর্বক টাকা আদায় করার অভিযোগও তুলেছেন তিনি। এই বিষয়ে পঞ্চায়েত প্রধান ইলিজা খাতুন মুখ খোলেননি। যদিও তাঁর স্বামী তৃণমূল নেতা শরাফত শেখ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, 'বিধায়কের তোলা অভিযোগ ঠিক নয়। এই পঞ্চায়েতে কোনও দুর্নীতি হয়নি। তিনি এই ভাবে অভিযোগ না করলেই পারতেন।'


বিধায়কের দ্বিতীয় অভিযোগ পূর্বস্থলীর জাহাননগর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সাগর ঘোষের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ পঞ্চায়েত প্রধান প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডারে স্বজনপোষণ,নিম্নমানের রাস্তা তৈরি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। জাহাননগর পঞ্চায়েত প্রধান সাগর ঘোষ দাবি করেন, 'বিধায়ককে কেউ ভুল বুঝিয়েছে। তিনি চাইলে পঞ্চায়েতে এসে কাগজ দেখতে পারেন। আর প্রয়োজনে ওঁর সঙ্গে বসে সব মিটিয়ে নেওয়া হবে।'


পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে বিধায়কের এই অভিযোগকে নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি অনিল দত্ত। তাঁর বক্তব্য, 'তৃণমূলের বিধায়ক যখন পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনছে, তার থেকেই স্পষ্ট যে তৃণমূল শুধু দুর্নীতিই করতে জানে। পঞ্চায়েতে আসা সরকারের টাকা আসলে নেতাদের পকেটে ঢোকে।' এমন মন্তব্যে স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, 'প্রধানদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে দলের নির্দিষ্ট সেলে বিধায়ক অভিযোগ জানাতে পারতেন। এইভাবে অভিযোগ না জানালেই ভাল হত।' তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে পূর্ব বর্ধমান জেলার মহকুমা শাসক প্রিয়ঙ্কা সিংহল জানিয়েছেন, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।