পূর্ণেন্দু সিংহ ও রাজীব চৌধুরী, বাঁকুড়া:খালি পায়ে স্কুলে যাচ্ছে শিশুরা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না হচ্ছে মিড ডে মিল (Mid Day Meal)। বাঁকুড়ার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ পরিদর্শনের পর দাবি কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর (Union Minister Of State For Education Subhas Sarkar)। সুভাষ সরকারের দাবি, রাজ্য সরকারের জন্যই আটকে রয়েছে পিএম ঊষা প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা। এক্স হ্যান্ডেলে পাল্টা জবাব দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।


বিবাদ...
মিড ডে মিল নিয়ে ফের কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ! বিবৃতি জারি করে অসন্তোষ প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের পর্যবেক্ষণ অনেকটাই গেরুয়া প্রভাবিত- পাল্টা জবাব দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। সম্প্রতি রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার হাল হকিকত খতিয়ে দেখতে রাজ্যে আসে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক ও দক্ষতা উন্নয়ন মন্ত্রকের ১৮ জনের এক প্রতিনিধিদল। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় সরকার পোষিত কলেজ, আইটিআই পরিদর্শন করে। পাশাপাশি, সমগ্র শিক্ষা অভিযান, PM পোষণ, PM ঊষা সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। কেন্দ্রীয় উচ্চ শিক্ষা দফতরের ডিরেক্টর এম এল সোনির নেতৃত্বে আসা প্রতিনিধি দল বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, রাজ্য সরকার মৌ স্বাক্ষর না করায় পিএম শ্রী প্রকল্পের বিশাল অঙ্কের টাকা আটকে রয়েছে। উচ্চ বিদ্যালয়ে স্মার্ট ক্লাসের জন্য কম্পিউটার বসানো হলেও সেগুলির সঠিক ব্যবহার করা হয়নি। খালি পায়ে শিশুদের স্কুলে যেতে দেখা গেছে। এর ফলে শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বহু স্কুলে মিড ডে মিল রান্না করা হচ্ছে খোলা জায়গায়। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার বলেন, 'আদিবাসী অধ্যুষিত তালডাংরার মোগাই প্রাইমারি স্কুল, যেখানে দেখা গেছে যে, শিশুরা খালি পায়ে হেঁটে স্কুলে আসছে। এটা আমরা জানিয়েছি। আমি আশা করব যে, প্রশাসন তাদেরকে এই মকর সংক্রান্তির মধ্যেই তাদের জুতোর ব্যবস্থা করুক। যদি না করে, তাহলে এই দক্ষিণায়ন থেকে উত্তরায়নের যাওয়ার সময় মকর সংক্রান্তির পরেই আমি তাদের জুতোর ব্যবস্থা করব। এটা জানালাম।' কেন্দ্রীয় উচ্চশিক্ষা দফতরের ডিরেক্টর এম এল সোনিরও বক্তব্য, '২-৩টি স্কুলে দেখেছি, খোলা জায়গাতেই রান্না হচ্ছে। রান্নার জন্য কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। এরকম খোলা জায়গায় রান্না করলে পোকা-মাকড় পড়ে যেতে পারে। তাহলে খাবার নষ্ট হয়ে যাবে। প্রকল্প সফল হবে না।' কেন্দ্রের এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি ঘিরে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।


রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য...
বিষয়টি নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী লিখেছেন, 'পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ায় কেন্দ্রীয় দলের পর্যবেক্ষণের পর প্রেস বিবৃতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক। আমাদের মনে হয়েছে, সেই পর্যবেক্ষণ অনেকটাই গেরুয়া প্রভাবিত। তারা পড়ুয়াদের খালি পায়ে থাকার কথা বলেছে। কিন্তু জানে না, পশ্চিমবঙ্গ সরকার সমস্ত পড়ুয়াদের স্কুলের পোশাক আর জুতো দেয়। ওরা খোলা আকাশের নীচে মিড ডে মিল রান্নার কথা বলেছে, কিন্তু মিড ডে মিলের শেড তৈরির জন্য ফান্ড আটকে রেখেছে...তবে চিন্তার কিছু নেই। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সীমিত ক্ষমতাতেই সমস্ত স্কুলে রান্নার জন্য শেড তৈরি করছে।' কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর অবশ্য বক্তব্য, 'যিনি বলেছেন, তিনি না জেনে বলেছেন। কারণ শিক্ষা হচ্ছে, রাজ্য ও কেন্দ্রের যৌথ বিষয়। সেখানে রাজ্য আগে মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এ সই করবে, করে যাদবপুর ইউনিভার্সিটির নাম রেকমেন্ড করবে, কী প্রয়োজন সেটা বলবে, তখন পাবে। কাজে এটা কোনও প্রশ্নই আসছে না। এটা একটা ভুল ব্যাখ্যা।' এনিয়ে তৃণমূলকে বিঁধেছে কংগ্রেসও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মতে, 'এ তো আইনি অধিকার। শিক্ষামন্ত্রী কোর্টে যাচ্ছেন না কেন? শিশুদের খাবার কেউ দিচ্ছে না, ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না। সব সময় তো দিচ্ছে না, দিচ্ছে না, দিচ্ছে না। এতো আইনি অধিকার। চোর বাঁচাতে কোর্টে যান, বাংলার শিশুদের, বাংলার গরিব মানুষের মিড ডে মিল আর ১০০ দিনের কাজের টাকা উদ্ধারে কোর্টে যান না কেন? চোর বাঁচাতে কোর্টে যাচ্ছেন, কোটি কোটি টাকা খরচা করছেন। খোকাবাবু কোর্টে যাচ্ছেন, বিনা পয়সায় তো হয় না। খোকাবাবু কোর্টে যখন যাচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্টে, সেখানে ১০০ দিনের কাজে, মিড ডে মিলের বঞ্চনার জন্য কয়েকটা কেস ঠুকছেন না কেন? আমি প্রশ্ন করতে চাই।' রাজ্যে মিড ডে মিল নিয়ে উঠেছে নানা রকম দুর্নীতির অভিযোগ, প্রশ্নের মুখে পড়েছে খাবারের মান। কোনও তরকারি নেই। ডাল, নেই ডিমও নেই! মিড ডে মিলে শুধু সাদা ভাত দেওয়ায় বুধবারই পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের করন্দা গ্রামে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবক ও গ্রামবাসীরা। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন BDO। এই প্রেক্ষিতে ফের পারদ চড়ল কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদের।

আরও পড়ুন:'শাস্ত্রের বিরুদ্ধে যাওয়া হচ্ছে', রাম মন্দির উদ্বোধনে নিয়ম লঙ্ঘনের 'অভিযোগ' দুই শঙ্করাচার্যের?