ময়ূখঠাকুর চক্রবর্তী,নয়াদিল্লি: বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাষ্ট্রপুঞ্জ। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের রিপোর্টের ভিত্তিতে সুপারিশ রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের।খবর বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘ডেলি স্টার’ সূত্রে ।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরের অগাস্টের ৫ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত সুনিশ্চিত করতে হবে।হাসিনা দেশ ছাড়ার পর অসংখ্য থানায় হামলা চালিয়েছে উন্মত্ত জনতা পুলিশ আধিকারিকদের পিটিয়ে মারা হয়েছে। আওয়ামি লিগের নেতা, কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। হিন্দু ও সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন', জুলাই অভ্যুত্থানের মহিলা আন্দোলনকারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে আওয়ামি লিগ, রিপোর্টে উল্লেখ।
বাংলাদেশ নিয়ে এবার উদ্বিগ্ন প্রকাশ করল রাষ্ট্রপুঞ্জ। হিন্দু নিপীড়ন থেকে পুলিশ খুন, নারী নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। রিপোর্টে উল্লেখ করল রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর। শান্তি ও রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ফেরানোর সুপারিশও করেছে তারা। সংঘর্ষ, ভাঙচুর, হিন্দুদের উপর অত্যাচার, খুনোখুনি। হাসিনা সরকারের পতনের পর, এগুলোই এখন বাংলাদেশের চেনা ছবি। যা থামা তো দূর, উল্টে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই এগোচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। কারও কারও আশঙ্কা বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে না তো? আর এই প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশ নিয়ে চূড়ান্ত উদ্বেগ প্রকাশ করল রাষ্ট্রপুঞ্জ। তাদের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দফতরের রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে বৈষম্য বিরোধী বিক্ষোভ এবং তার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের হিন্দু, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। সরকারের পতনের পর হিন্দুদের বাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক হামলা চালানো হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের হিংসাত্মক আন্দোলন হোক কিংবা হিন্দুদের উপর অত্যাচার। প্রত্যেকবারই নানা পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে ইউনূস সরকার। কিন্তু, সে সবই যে আদতে লোক দেখানো, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টেও। সেখানে বলা হয়েছে,
বিভিন্ন ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর উপর হামলার সঙ্গে জড়িত ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু প্রতিশোধমূলক হিংসা ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর উপর হামলার অপরাধীরা এখনও মুক্ত রয়েছে।ইউনূসের আমলে ছাত্র আন্দোলনের সময়ে প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড ও হিংসার ঘটনাকে 'উদ্বেগজনক' বলে উল্লেখ করা হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে। এমনকী নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও পরিকল্পিতভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের রিপোর্টের ভিত্তিতে, হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে শান্তি এবং রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ফেরাতে সুপারিশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন। পাশাপাশি, অন্তর্বর্তী সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে আওয়ামী লিগ সমর্থক, পুলিশ কর্তা ও বিভিন্ন ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর সদস্যদের উপর হিংসাত্মক অপরাধের দ্রুত এবং স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে হবে এবং চিহ্নিত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
শেখ হাসিনার আমলেও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইউনূস আমলে যা চরমে পৌঁছেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টেও হাসিনার সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লিগের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে তাদের তথ্যানুসন্ধান দল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীগুলোর সঙ্গে সমান্তরালভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আরও পড়ুন, বাংলাদেশে একের পর এক স্মৃতি ধ্বংস মুজিবের, বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত জিনিস পরম যত্নে রক্ষা কলকাতায়