রানাঘাট: যে কোনও রেল স্টেশনের রাতের ছবি মোটামুটি আমাদের সকলের চেনা। কেউ কেউ আধপেট খেয়ে থাকে, তো কেউ কিছুই হয়তো খায়নি। কেউ কেউ নিত্যযাত্রীদের কাছে হাত পেতেও বিশেষ লাভ করতে পারেননি। হয়তো বা জঞ্জালের স্তূপ ঘেঁটে খাবার খোঁজার চেষ্টায় রয়েছেন কেউ। বাচ্চা থেকে বুড়ো, এমন হাজারো মুখ হামেশাই দেখা যায় রেল স্টেশন চত্ত্বরে। 


একই ছবি রানাঘাট স্টেশনেও। তবে দিন তিনেক আগে রানাঘাট স্টেশনে যেন স্বয়ং ভগবান এসে হাজির। গত শুক্রবারের রাত। শীতের রাত। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এটা যে বিয়ের মরসুম তা জানতে বাকি নেই কারও। কিন্তু তেমনই এক বিয়েবাড়ি থেকে যে এই অসহায় মুখগুলোয় খাবার উঠতে পারে তা কেউই ভাবেননি। দুই হাত উজাড় করে যিনি খাবার নিয়ে এলেন, তাঁর নাম, পাপিয়া কর। 


আরও পড়ুন: Google Doodle: গুগল ডুডলে আজ কেন পিৎজা নিয়ে সেলিব্রেশন হচ্ছে?


ঠিক কী ঘটেছিল শুক্রবার রাতে? সেদিন তাঁর ভাইয়ের বৌভাত ছিল। এলাহি আয়োজন। ভুরিভোজের ব্যবস্থাও ছিল দেখার মতো। সকল আমন্ত্রিতদের খাওয়া দাওয়া শেষে দেখাল যায়, প্রচুর খাবার বেঁচে গেছে। পরিবারের মধ্যেই সেই বাড়তি খাবার ভাগ করে নিতে পারতেন তাঁরা। কিন্তু একটু অন্যভাবে ভাবেন পাপিয়া। সমস্ত বাড়তি খাবার নিয়ে এসে পৌঁছন রানাঘাট স্টেশনে, রাত তখন প্রায় ১টা। ভাত, ডাল, সবজি, তরকারি, মাছ, মাংস, চাটনি, পাপড় সব নিয়ে এসে উপস্থিত হন পাপিয়া কর। পরনে তখনও বিয়েবাড়ির শাড়ি, মেকআপ। স্টেশন চত্ত্বরের পথশিশু ও অভুক্তদের জন্য পাপিয়া হাজির গোলাপী শাড়িতে।


ধীরে ধীরে ভাইরাল হতে থাকে পাপিয়া করের এই উদ্যোগ। তিনি নিজেই প্রথমে সেদিন রাতের ছবি পোস্ট করেন নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরপর আরও একটি পোস্ট করে জানান, ৩০ জন অভুক্ত মানুষকে সেদিন ভাইয়ের বৌভাতে নিমন্ত্রণও করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁদের ছাড়াও আরও ৫০ জনের খাবার রান্না বেশি করে করা হয়। বৌভাতের আসর থেকে কনেযাত্রী ফিরে যেতেই সমস্ত খাবার নিয়ে বাকিদের কাছে হাজির হন পাপিয়া কর ও তাঁর স্বামী। 


 



পাপিয়া করের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন একাধিক স্বেচ্ছ্বাসেবী সংস্থা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। তিনিও চান, এই বিয়ের মরসুমে আরও যাঁদের বাড়ির খাবার বাড়তি হচ্ছে তাঁরাও যাতে এমন কাজে এগিয়ে আসেন। তাহলে রাস্তার কিছু অভুক্ত মানুষের পেটও ভরে, মুখে হাসিও ফোটে।