কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: অমর্ত্য সেনের (Amartya Sen) বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগের পর এবার ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য বিশ্বভারতীর (Viswa Bharati University) উপাচার্যর। 'বিশ্বভারতীতে আমরা সবাই নিজেকে রাবীন্দ্রিক বলি, অন্যায় করলেও রাবীন্দ্রিক, জমি কব্জা করলেও রাবীন্দ্রিক, বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে গালিগালাজ করলে, সেটাও রাবীন্দ্রিক। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে অপমান করলে, সেটাও রাবীন্দ্রিক। এখন রাবীন্দ্রিক শব্দটি স্বার্থসিদ্ধির সোপান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।' উপাসনা গৃহে মন্তব্য বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর।


পাল্টা কটাক্ষ আশ্রমিকের:
উপাচার্যর মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর। তিনি বলেন, 'যে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, তাঁকে অপমান করছেন উপাচার্য।'


রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
এই ধরনের অভিযোগ উঠলে নিজের থেকেই প্রকাশ্যে আনা উচিত, জমি-বিতর্কে অমর্ত্য সেন সম্পর্কে মন্তব্য দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh)। 'কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করার কারণেই নিশানা করা হচ্ছে অমর্ত্য সেনকে। তৃণমূল নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের পাশে আছে।' প্রতিক্রিয়া সৌগত রায়ের (Sougata Roy)।

জমি-অভিযোগ:
মঙ্গলবার অধ্যাপক সেনকে নোটিস দিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অমর্ত্য সেন অবৈধভাবে বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে আছেন। এই জমি যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দিন। আপনি যদি চান বিশ্ববিদ্যালয় এবং আপনার সার্ভেয়ার বা আইনজীবীর উপস্থিতিতে যৌথভাবে জমির জরিপ করা হবে। কর্তৃপক্ষের দাবি, ভবিষ্যতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ যাতে সমস্যার মুখে না পড়েন, সেই তাগিদ থেকেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, 'এই চিঠিটার মূল বক্তব্য হচ্ছে এটাই যে, অধ্যাপক সেন, কাগজ অনুযায়ী কিছু জমি উনি বেশি নিয়েছেন। যে জমিটা ওনার পাওয়ার কথা ছিল, তার থেকে কিছু বেশি জমি ওনার আয়ত্তে আছে। সেই জমিটার ব্যাপারে আমরা আগেও ওনাকে লিখেছিলাম যে, জমিটা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। যেহেতু উনি এখন শান্তিনিকেতনে আছেন, সেইজন্য হাতে হাতে একটা চিঠি দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।আমরা এ নিয়ে আলোচনা করতেও প্রস্তুত। উনি যদি কালকে আমাদের ডাকেন, আজকে চিঠিটা ওনার হাতে পৌঁছনো হয়েছে। আমরা এ নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। আমরা এই সমস্যাটার সমাধান করতে চাই। কারণ উনি একজন নমস্য ব্যক্তি, জগত বিখ্যাত একজন অর্থনীতিবিদ। আমরা খুব গর্বিত উনি শান্তিনিকেতনে থাকেন। তাই আমরাও চাই না এই ব্যাপারটা নিয়ে ভবিষ্যতে কোনও সমস্যার মধ্যে উনি পড়েন।' 


বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে দাবি, ১৯৪৩ সালে অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের বাবা আশুতোষ সেনকে ১২৫ ডেসিমেল জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়। ২০০৬ সালে অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের আবেদনের ভিত্তিতে, সেই লিজ জমি তাঁর নামে হস্তান্তর করা হয়। কর্তৃপক্ষের দাবি, রেকর্ড ও সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জমি অমর্ত্য সেনের লিজ পাওয়া জমির মধ্যে থেকে গেছে। যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জানিয়েছেন, তাঁর বাবা ওই অতিরিক্ত জমি কিনেছিলেন। তাঁর প্রশ্ন, এতদিন পর কেন এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ? বছর দুয়েক আগেও অমর্ত্য সেনের বাড়ির জমি নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল।যার প্রতিবাদে সেইসময় কলকাতায় মিছিল করেছিলেন বিদ্বজনেদের একাংশ। 


বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে জমি সংক্রান্ত নোটিস পাওয়ার পর এবিপি আনন্দকে এক্সক্লুসিভ প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জানিয়েছেন, 'আমার বাড়ির জমির একটা অংশ বিশ্বভারতী থেকে লিজ নেওয়া। বাকি অংশ কেনা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য বানানো, মিথ্যে কথা। ওদের রুচিতে এমনটাই মানায়। আগেও এমন মিথ্যে কথা বলেছে। আমার আইনজীবী তার জবাব দিয়েছেন। এবারও আইনজীবী জবাব দেবেন।'


আরও পড়ুন: বিচারপতির নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ নাবালিকা ধর্ষণে অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্রনেতা