কলকাতা: একদিন আগেই নাম ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্ব। সেই মতো রাজ্যসভা নির্বাচনের (Rajya Sabha Elections) আগে রাজ্য বিধানসভায় মনোনয়নপত্র জমা দিলেন দ্য গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা নগেন্দ্র রায় ওরফে অনন্ত মহারাজ (Ananta Maharaj)। বঙ্গ বিজেপি-র (BJP) সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন তিনি।  বরাবর পৃথক কোচবিহার রাজ্য, পরবর্তী কালে পৃথক কেন্দ্রশাসিত কোচবিহারের দাবি জানানো অনন্তকে প্রার্থী করার সপক্ষে ব্যাখাও দিলেন সুকান্ত (Sukanta Majumdar)। 


বৃহস্পতিবার রাজ্যসভা নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। এদিন দুপুরেই সেই মতো মনোনয়ন জমা দেন বিজেপি-র প্রার্থী অনন্ত। বাংলা ভাগের দাবি জানানো অননন্তকে কেন প্রার্থী করা হল, এদিন সংবাদমাধ্যমে তার জবাব দেন সুকান্ত। তাঁর দাবি, বাংলায় উন্নয়ন বরাবর কলকাতাকেন্দ্রিক থেকেছে। তাতে অন্য প্রান্তের মানুষজন নিজেদের বঞ্চিত বলে মনে করেন। বঞ্চনা না হলে, দাবিও আর থাকবে না। 


সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এদিন সুকান্ত বলেন, "অনুন্নয়নের জন্য উত্তরবঙ্গে বার বার এমন দাবি উঠেছে। শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, রাঢ়বঙ্গেও এই ধরনের দবি শোনা গিয়েছে। অস্বীকারের কোনও জায়গা নেই। কিন্তু এর মূল কারণ হল অনুন্নয়ন। বাংলার সমস্ত উন্নয়ন কলকাতকেন্দ্রিক। উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়ায়, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মনে হয়, তাঁদের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। এই অনুন্নয়ন যদি দূর করে দিতে পারি আমরা, তাহলে ওই দাবিও আর থাকবে না।"


আরও পড়ুন: Rajya Sabha Elections: পৃথক রাজ্যের দাবিতে সরব অনন্ত মহারাজের নামেই সিলমোহর, বাংলা থেকে রাজ্যসভায় প্রার্থী করল BJP


তবে শুধু অনন্ত নয়, বিজেপি সাংসদ জন বার্লা-সহ বিজেপি-র একাধিক নেতার মুখে বাংলা ভাগের দাবি শোনা গিয়েছে একাধিক বার। তাঁদের প্রাধান্য দেওয়ার নেপথ্যে কি তাহলে বিজেপি-রও সেই দাবিতে সমর্থন রয়েছে, প্রশ্ন করা হয় সুকান্তকে। জবাবে তিনি বলেন, "আমরা আগেই জানিয়েছি, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বাংলাকে যে রূপে তৈরি করে গিয়েছিলেন, আগামী দিনে সেই রূপেই বাংলাকে দেখতে এবং রাখতে চাই আমরা।"


সুকান্তের মন্তব্য নিয়ে এদিন কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি অনন্ত। তবে গোড়া থেকেই বাংলা ভাগে দাবি জানিয়ে আসছেন তিনি। গত কয়েক বছরে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর দহরম মহরম ঘিরে অবধারিত ভাবে তাই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। কারণ ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এবং ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র প্রচারেও থাকতে দেখা গিয়েছিল অনন্তকে। বাংলা ভাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা অনন্তের বাড়িতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিশীথকেও। 


অনন্তকে পাশে পেতে তৃণমূলের তরফেও চেষ্টায় ত্রুটি ছিল না। গতবছর ভাইফোঁটায় অনন্তকে শুভেচ্ছাবার্তা এবং উপহার পাঠান তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাল্টা সৌজন্য দেখান অনন্তও। তার পর কোচবিহার পুরসভার আমন্ত্রণে রাসমেলার উদ্বোধনী মঞ্চেও দখা যায় তাঁকে। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে বারবর দূরত্ব বজায় রাখার কথাই বলে এসেছেন অনন্ত। 'বাংলা ভাগ হয়ে গিয়েছে' বলে মন্তব্যও করেন তিনি। তবে তৃণমূল তাঁর অবস্থানে সমর্থন জানায়নি কখনওই। বরং বাংলা ভাগের দাবিকে বরাবর খারিজ করে এসেছে তারা।