কলকাতা: রাজ্য এবং রাজ্যপালের মধ্যে সংঘাতে ইতি পড়ার লক্ষণই নেই কোনও। শিক্ষাক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের জন্য অর্থনৈতিক অবরোধ তৈরি করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তার কয়েক ঘণ্টা পরই মধ্যরাতে ফের কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এবার কড়া ভাষায় মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির জবীব দিলেন তিনি। প্রতিবাদ জানানোর থাকলে, তা রাজভবনের ভিতরে এসে জানানো উচিত বলে মন্তব্য করলেন তিনি। (CV Ananda Bose)
মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য নিয়োগের সপক্ষে ইতিমধ্যেই বিল পাস হয়েছে রাজ্য বিধানসভায়। কিন্তু রাজ্যপাল তাতে স্বাক্ষর না করায়, সেই বিল আইনে পরিণত হয়নি এখনও পর্যন্ত। সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই একাধিক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন রাজ্যপাল বোস। কিন্তু তা করতে গিয়ে রাজ্যপাল এক্তিয়ারের পরোয়া করছেন না বলে অভিযোগ রাজ্যের। যখন যাঁকে ইচ্ছে উপাচার্য পদে বসিয়ে দওয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের। খোদ মমতাও সেই নিয়ে সরব হন। রাজ্যপাল যা ইচ্ছে তাই করলে, তাঁর সরকারও অর্থনৈতিক বাধা সৃষ্টি করবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। রাজভবনের বাইরে ধর্নায় বসতে বাধ্য হবেন বলেও জানান।
সেই নিয়ে চর্চার মধ্যেই এবার মুখ খুললেন রাজ্যপাল বোস। দিল্লি থেকে ফিরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, "আমি আচার্য হিসেবে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছি। শিক্ষা দফতর বলল, এটা ভুল। কলকাতা হাইকোর্ট বলল আমিই ঠিক। বাংলার শিক্ষা মন্ত্রণালয় যাদেরকে উপাচার্য হিসেবে নির্বাচিত ও নিয়োগ করেছে সেই নির্বাচন পদ্ধতিতে কিছু ত্রুটি ছিল। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, তাদের যেতে হবে, পদত্যাগ করতে হবে। যে পাঁচ জন অন্তর্বর্তী উপাচার্যের পদত্যাগ দুঃখজনক। তাঁরা বলেছেন, তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ভয় পাচ্ছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমার বাংলার ভাই ও বোনেরা আমাকে বলুন, আপনারা কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্যাম্পাসে হিংসা চান? আপনারা কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্যাম্পাসে দুর্নীতি চান?"
আরও পড়ুন: CV Ananda Bose: ‘১০ কোটি বাঙালি পাশে আছেন, আমি যুদ্ধ করব’, মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পাল্টা রাজ্যপাল
ক্যাম্পাসের নরখাদকদের তদন্তের আওতায় আনতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে গড়ে ওঠা মাফিয়া রাজ শিক্ষা পাবে বলেও এদিন মন্তব্য করেন তিনি রাজ্যপাল বোসের বক্তব্য, "আমি নেতাজির নামে শপথ করছি। আমি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে শপথ করছি। আমি স্বামী বিবেকানন্দের নামে শপথ করছি। আমি বাঙালিয়ানার শপথ করছি। আমি আইনের শপথ করছি। বাংলার মানুষের নামে শপথ করে বলছি। আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই করব। আমি একা থাকতে পারি কিন্তু আমি একা নই। ১০ কোটি বাঙালি আমার সঙ্গে আছে। এটাই আমার শক্তি। আপনারা আমার পিছনে থাকলে আমি একা চলতে পারি। হিংসা চলবে না, দুর্নীতিও হবে না। একলা চলো। বাংলার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আমার নোয়াখালি হোক। জয় ভারত, জয় বাংলা।"
এদিন রাজ্যপাল জানান, বাংলার ভাল করতেই এসেছেন তিনি। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বাংলার সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হিংসা এবং দুর্নীতি থেকে মুক্ত হওয়া উচিত। বাংলার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে বলেও জানান তিনি। বলেন, "আপনারা কি চান আমি পালিয়ে যাই? নাকি আপনারা চান আমি দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করি? আমি যুদ্ধ করব।"