কলকাতা: পড়াশোনা করেছেন। দুরন্ত রেজাল্টও করেছেন। কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে কি খুব আশাবাদী উচ্চমাধ্যমিকের কৃতীরা। রাজ্যে যখন নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় চলছে, দুর্নীতি ভয়াবহ ছবি প্রতিদিন আরও ভয়াবহ চেহারায় সামনে আসছে তখন সেটা কি তাঁদের মনে প্রভাব ফেলছে না? উত্তর দিয়েছেন খোদ উচ্চমাধ্যমিকের কৃতীরা। ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তাঁদের বক্তব্য বারবার উঠে এসেছে নিয়োগ-দুর্নীতির প্রসঙ্গ। 


ভাবায় নিয়োগ দুর্নীতি:
এবার উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় চতুর্থ স্থান পেয়েছেন প্রেরণা পাল। উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুর হাই স্কুলের পড়ুয়া প্রেরণার কথায় উঠে এসেছে নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গ। প্রেরণা বলেন, 'ছোটবেলা থেকে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠিয়ে অভিভাবকরা একপ্রকার নিশ্চিত হন যে বাচ্চা স্কুলে কিছু শিখবে। স্কুলে শুধুমাত্র বইয়ের বিদ্যা শেখানো হয় না। মূল্যবোধ, মানবিক চেতনা, এথিক্স শেখার ভিত্তি। বাচ্চা যে বিকশিত হবে তার ভিত্তি স্কুল। সেখানে শিক্ষাক্ষেত্রে এই যে দুর্বিষহ দুর্নীতি সেটা আমাকে ভীষণভাবে ভাবাচ্ছে। এই যে দেখতে পাই, দাদা-দিদিরা রাস্তায় আন্দোলন করছে, কোনও উচ্চবাচ্য নেই। এটা ভাবায়। এখান থেকে তো বেরতে হবেই। যাঁরা যোগ্য তাঁরা সুযোগ পাচ্ছে। এটা ভীষণভাবে অবসাদমূলক।' শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। সেই জায়গাটা এতটা দুর্নীতি ভাবায় তাঁকে, জানালেন প্রেরণা। 


প্রেরণার বাবা-মা দুজনেই শিক্ষক। তাঁর দাদুও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। প্রেরণার হতাশা উঠে এসেছে তাঁর কথায়, 'মানুষ গড়ার কারিগর যাঁরা। সেখানে এমন কিছু মানুষ যাচ্ছেন। তাঁদের মান ও হুঁশ কিছুই নেই।' নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সাধারণ মানুষদের একাংশের চিন্তাভাবনাও তাঁকে ভাবায় বলে জানান তিনি। তাঁর দাবি বিষয়টি নিয়ে অনেকেই উদাসীন।


ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সময় পড়াশোনার ফল মিলবে কিনা তা নিয়েও আশঙ্কা লুকোননি প্রেরণা। তিনি বলেন, 'আমার বাবা-মা দুজনেই শিক্ষক। সেই সুবিধা সবাই পায় না। সবার বাবা-মা রক্তজল করে এমনভাবে পড়াশোনা করান যাতে শেষে একটা সরকারি চাকরি পাওয়া যায়। তাহলে শেষ বয়সে একটু ভাল ভাবে কাটাতে পারে। আমার চেনা বহু মানুষ রয়েছেন তাঁরা কবে টেট হয়েছে, এসএসসি দিয়ে বসে রয়েছেন তাঁরা বেকার। আমি যেহেতু জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করছি। তাই আমারও চিন্তা হয়। এতদূর পড়াশোনা করছি, তারপর দাঁড়াতে পারব তো। যখন রাজ্যে এমন দুর্দশা দেখছি। তখন তো চিন্তা হবেই।'


ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা:
একই বিষয় নিয়ে চিন্তার কথা জানিয়েছেন উচ্চমাধ্যমিকে কলকাতায় প্রথম হওয়া যাদবপুর বিদ্যাপীঠের পড়ুয়া সৃজা উপাধ্য়ায়। তিনি বলেন, 'শিক্ষাক্ষেত্রে যে দুর্নীতির সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। এতে যাঁদের চাকরিটা প্রাপ্য তাঁদের যেমন ক্ষতি হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদেরও ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রটাতে শক্ত করলেই দেশ নিজে নিজেই সাফল্যের দিকে এগোবে।' তাঁর আক্ষেপ, 'খবরের চ্যানেল চালালেই এখন দুর্নীতি দেখা যায়। আমরাও চিন্তিত হয়ে পড়ি। রেজাল্ট করলেও তা কতটা মান পাবে সেটা আমাদের ভাবায়।'


আরও পড়ুন: জিমেলে স্টোরেজে সমস্যা? মেল ঢুকছে না? চটজলদি কী করবেন?