হিন্দোল দে, কলকাতা: বাবা, মা আর একমাত্র সন্তান। এই নিয়েই পরিবার। মালপত্র আনা-নেওয়ার জন্য ছোট একটি গাড়ি রয়েছে শুভ্রাংশুর বাবা তাপস সর্দারের। নিজেই চালান। সেই রোজগারেই পরিবার চালান, আর ছেলের পড়াশোনার খরচ চালান। আর মা সামলান বাড়ির সবদিক। তার সঙ্গে সেলাই করে যতটুকু আয়। 


অতি সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবার যেমন হয় ঠিক তেমন একটি পরিবার। তবে তাঁদেরও স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ঘিরে। সেই স্বপ্নপূরণ করার জন্য় যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে তাঁদের ছেলেও। ফলও মিলেছে, অর্থনীতি, রাশিবিজ্ঞান, অঙ্কের কম্বিনেশন নিয়ে পড়াশোনা করে ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যের মেধাতালিকায় সবার শীর্ষে শুভ্রাংশু সর্দার। আর সেই খবরেই খুশির হাওয়া সর্দার পরিবারে।


চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বাড়়ির কাছেই একটি প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন শুভ্রাংশু। তারপর পঞ্চম শ্রেণি থেকে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের পড়ুয়া। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আবাসিক স্কুলে থেকে পড়াশোনা। তাই পড়াশোনা-খেলাধূলা সব নিয়ে জগৎ ছিল তাঁর। নিয়ম মেনে পড়াশোনা আর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল মিলেছে উচ্চমাধ্যমিকের ফলে। এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র শুভ্রাংশু সর্দার। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৬। শতকরার হিসেবে পেয়েছেন ৯৯.২ শতাংশ। 


ছেলের পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন মা শম্পা সর্দার। বললেন, 'আমি ভাবতেই পারছি না। ছেলে বলেছিল কিছু একটা করবে। ছেলের উপর বিশ্বাস ছিল।' ছেলে কীভাবে পড়াশোনা করবে তা অবশ্য ছেলের উপরেই ছেড়েছেন তিনি। বলেছেন, 'ও যা করবে, ওর ব্য়াপার। ও যেটা করবে ভালই করবে বিশ্বাস আছে।'


গর্বে বুক ফুলে উঠেছে বাবা তাপস সর্দারের। ছেলের পড়াশোনার জন্য প্রাণপাত করেছেন তিনি। তাই ছেলের এই ফলে স্বাভাবিকভাবেই খুশি বাঁধা মানেনি। ছেলেকে কী বলেছেন তিনি? তাপসবাবু জানালেন, 'আমি বলেছি, তোর যেটা করার ইচ্ছে। তুই করবি। আর্থিক সাহায্য যা দরকার আমি করব। আমার ইচ্ছেটাই তাই, আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটলে যেন বলে শুভ্রাংশুর বাবা যাচ্ছে।' 


ছোটবেলায় কেমন ছিলেন শুভ্রাংশু? জানালেন তাঁর মা। তিনি বলেন, 'ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক ছিল শুভ্রাংশুর। বিছানার মধ্যে একটা জায়গা ছিল। ছোটবেলায় যখন টিভি দেখত। তখন হয় আঁকত, নয়তো অঙ্ক করত।' আর ছোট থেকেই বই ছিল শুভ্রাংশুর সঙ্গী। স্কুলের লাইব্রেরিতেই সময় কাটত তাঁর। উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করলে মায়ের কাছে বইও চেয়ে রেখেছেন তিনি। ছোট থেকেই শান্তশিষ্ট। বইয়ের প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। এমনটা বলেছেন শুভ্রাংশুর বাবাও। তিনি বলেন, 'ছেলের ভাল রেজাল্ট হবে আশা করেছিলাম। কিন্তু প্রথম হবে ভাবিনি।'


শুভ্রাংশু কী বলছে?
উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বলছেন, 'পরীক্ষা ভাল দিয়েছিলাম। যেটুকু আমার হাতে ছিল। চেষ্টা করেছিলাম। বাকিটা তো আমার হাতে নেই।  দিনে মোটামুটি চার ঘণ্টা পড়েছি। প্রতিদিন অন্তত চারঘণ্টা পড়াশোনা। আমি তো আবাসিক ছাত্র। স্কুলের অবদান আর না বললেই চলে। স্কুল যা বানায় আর কিছু বলার নেই। নরেন্দ্রপুরের একটা ঐতিহ্য রয়েছে।' ছোটদের জন্য তাঁর পরামর্শ, 'পড়াশোনা করতে হবে। না খেটে কিছু হবে না।'


আরও পড়ুন: জিমেলে স্টোরেজে সমস্যা? মেল ঢুকছে না? চটজলদি কী করবেন?