কলকাতা: প্রার্থিতালিকা ঘিরে অসন্তোষ, বিক্ষোভ এখন অতীত। সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে রাজ্যে ফের সবুজ ঝড়। তবে অসন্তোষ পর্ব যে ভুলে যায়নি দল, তা মনে করিয়ে দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল (TMC) নেতা ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। জানিয়ে দিলেন, বকেয়া পুরভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে ভোটের ময়দানে নেমেছিলেন যাঁরা, এখনই তাঁদের দলে ফিরিয়ে নেওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।
বুধবার ১০৮ পুরসভা কেন্দ্রের নির্বাচনী ফলাফলের ঘোষণা চলছে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত যত আসনে গণনা শেষ হয়েছে, তাতে ১০৩টিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। এর মধ্যে ৩১টি পুরসভা আবার সম্পূর্ণ ভাবে বিরোধীশূন্য। দল না চাইলেও, মানুষ যদি বিরোধীশূন্য প্রশাসন চান, সেখানে তাঁদের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
আর তাতেই তৃণমূল থেকে নির্দল প্রার্থী হওয়া নেতা-নেত্রীদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে ফিরহাদ বলেন, “এখনও পর্যন্ত নির্দলদের ফেরানোর ব্যাপারে কোনও সঙ্কেত দেয়নি দল। যাঁরা নির্দল, তাঁরা নির্দলই থাকবেন। আমরা তৃণমূলের বিজয়ী প্রার্থীদের শুভেচ্ছা জানাই। বিরোধীদের যাঁরা জিতেছেন, তাঁদেরও শুভেচ্ছা। আসুন সকলে মিলেমিশে কাজ করি।”
২০২১-এর বিধানসভা থেকে কলকাতা পুরসভা এবং বিধাননগর, আসানসোল, চন্দননগর, শিলিগুড়ি পুরসভা নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন পেয়ে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল। বকেয়া পুরভোটেও সবুজ ঝড়ই উঠবে বলে নিশ্চিত ছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। কিন্তু সেই জয়ের রাস্তা কুসুমাস্তীর্ণ হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দলীয় কলহই।
আরও পড়ুন: Municipal Election Result : কাঁচরাপাড়ায় জিতলেন মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়| Bangla News
পুরভোটের প্রার্থিতালিকা নিয়ে প্রথমে ধন্দ দেখা দেয়। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাক অযথা প্রার্থিতালিকায় নাক গলাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এর পর দলের তরফে যে প্রার্থিতালিকা প্রকাশিত হয়, তা নিয়েও দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দলের জন্য কাজ করে গেলেও, পুরভোটের টিকিট থেকে অন্যায় ভাবে তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন দলে দলে নেতা-নেত্রীরা।
দ্বন্দ্ব এতটাই চরমে ওঠে যে, রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিক্ষুব্ধরা। দলের কার্যালয় থেকে ছিঁড়ে ফেলা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি, ফ্লেক্স এবং ব্যানার। দলের প্রতীকও মুছে ফেলা হয় একাধিক জায়গায়। আবার দলের তরফে সিলমোহর না পড়লেও, জায়গায় জায়গায় নিজেদের নামে দেওয়াললিখনে হাত দেন অনেকে।
এ নিয়ে দলীয় নেতৃত্ব কড়া বার্তা দিলে ভোটের মুখে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন একে একে অনেকেই। জোড়াফুল শিবিরের নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবেই মনোনয়ন জমা দেন। তৃণমূলে প্রাপ্য সম্মান মেলেনি বলেই এমন পদক্ষেপ করতে হয়েছে বলে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন। অনেকে আবার বিদ্রোহ ঘোষণা করেও, পরে পিছু হটেন।
কিন্তু এই বিদ্রোহ যে জোড়াফুলের ভোটবাক্সে কোনও প্রভাব ফেলেনি, তা পরিষ্কার হয়ে গেল বুধবার ফলাফল ঘোষণার পরই। ১০৮টির মধ্যে বকেয়া ১০৩ পুরসভার দখলই উঠেছে তৃণমূলের হাতে। বামেরা একটি পুরসভায় জয়ী হয়েছে। ত্রিশঙ্কু হয়েছে তিন পুরসভায়। নবাগত হামরো পার্টি দখল করেছে দার্জিলিং পুরসভা।
তবে তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই ফিরহাদের। বরং যাঁরা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন এবং যাঁরা দেননি, সকলকেই ধন্যবাদ জানান তিনি। বিরোধী শিবিরের নেতাদেরও জয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সকলের দীর্ঘ জীবন কামনা করার পাশাপাশি লড়াইয়ের জন্য অভিন্নদন জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “বিবিধের মাঝে মিলন মহান বাংলার সংস্কৃতি।” কাউকে ঘৃণা নয়, সকলকে ভালবাসা দেওয়াতেই তাঁরা বিশ্বাসী বলে জানিয়েছেন ফিরহাদ। বিরোধীদের সবরকম ভাবে সাহায্য করতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।