আশাবুল হোসেন, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও রুমা পাল, কলকাতা : উপাচার্য (Vice Chancellor) নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠন সংক্রান্ত বিল পাস হয়ে গেল বিধানসভায়। বিলের পক্ষে ভোট পড়ল ১২০ টি। বিপক্ষে ৫১ টি। বিজেপির অভিযোগ, ৫ জনের সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতি কায়েম করতে চাইছে শাসকপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপালেরও দ্বারস্থ হয়েছে তারা। যদিও বিজেপির তোলা যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Education Minister Bratya Basu)।


রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি সংক্রান্ত বিল পাস হল বিধানসভায় (Assembly)। আরও আলোচনা চেয়ে বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তুলেছিল বিরোধীপক্ষ ! কিন্তু তা নিয়ে ভোটাভুটিতে ১২০ জন রইলেন বিলের পক্ষে। বিপক্ষে ভোট পড়ল মাত্র ৫১-টি।ভোটাভুটিতে হারের পর বিলকে আইনে পরিণত হওয়া থেকে আটকাতে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হল বিজেপি (BJP)। 


রাজ্যের ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে অর্ডিন্যান্স জারি হয়েছিল আগেই। এই প্রেক্ষাপটেই জোর চর্চা শুরু হয় দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি লজ অ্যামেন্ডমেন্ড বিল নিয়ে। শুক্রবার এই বিল বিধানসভায় পেশ করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এতদিন রাজ্যে উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটিতে ৩ জন প্রতিনিধি থাকতেন। নতুন বিল অনুযায়ী, সার্চ কমিটিতে রাখা হয়েছে ৫ জনকে। প্রথম - রাজ্যপাল তথা আচার্যের প্রতিনিধি। তিনিই হবেন সার্চ কমিটির চেয়ারপার্সন। থাকবেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি। ইউজিসির চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি এবং উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি।


আগে উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি ৩ জনের নাম পাঠাত। নতুন বিল অনুযায়ী, এখন সার্চ কমিটি ৫ জনের নাম পাঠাবে। দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি লজ অ্যামেন্ডমেন্ড বিল - ২০২৩ অনুযায়ী, উপাচার্য হিসাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসাবে ১০ বছর পড়ানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।


এই বিলে আপত্তি তুলে বিজেপি যুক্তি দেয়, উপাচার্য নিয়োগে যে সার্চ কমিটি গড়া হয়েছে, তাতে ৫ জনের মধ্যে, রাজ্য সরকারের তরফেই ৩ জন প্রতিনিধি থাকছেন। ফলে বিরোধীদের আশঙ্কা, উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনীতি হবে। তাই বিরোধীরা দাবি তোলে, আলোচনার জন্য বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক। অথবা এই ব্যাপারে জনগণের মতামত নেওয়া হোক।  পাল্টা শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি এবং কেন্দ্রের ৩ জন প্রতিনিধি থাকেন। তাহলে এক্ষেত্রে কেন আপত্তি তোলা হচ্ছে ? সরকারপক্ষের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, ইউজিসি-র গাইডলাইন এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে।


বিলের বিরোধিতায় এদিন বিজেপি টেনে আনে, মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার উদ্যোগের প্রসঙ্গ। তার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, রাজ্যপালের উপাচার্য নিয়োগের প্রসঙ্গটি তুলে, শিক্ষামন্ত্রী জবাব দেন, আমরা শিক্ষার স্বাধিকারের পক্ষে। আমরা চাই, এমন কাউকে উপাচার্য করতে, যিনি শিক্ষার আঙিনার সঙ্গে যুক্ত। কোনও প্রাক্তন আইপিএস বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির ১০ বছরের অধ্যাপনা করার অভিজ্ঞতা আছে কি ? বিজেপি বিধায়কদের বেঞ্চ থেকে বলা হয়, হাইকোর্ট তো রাজ্যপালের পক্ষেই রায় দিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কী করা যায়, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। 


এরপরই শুরু হয় ভোটাভুটি। বিলের পক্ষে পড়ে ১২০টি ভোট। ৫১ ভোট পড়ে বিলের বিরোধিতায়। এবার রাজ্যপাল বিলে অনুমোদন দিলেই, তাহলে তা পরিণত হবে আইনে। এদিন অধিবেশন শেষ হতেই মনোজ টিগ্গার নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা রাজ্যপালের দ্বারস্থ হন। নতুন বিল অনুযায়ী, কোনও উপাচার্য কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে, ১ বছরের মধ্যে পরবর্তী উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে। কোনও উপাচার্যের মেয়াদ শেষের পরে, যতক্ষণ না পর্যন্ত নতুন কেউ নিযুক্ত হচ্ছেন, ততদিন আগের উপাচার্যই কাজ চালাবেন। সর্বোচ্চ মেয়াদ ১ বছর।


আরও পড়ুন- অসুস্থ বাবা, সংসার চালাতে টোটোর স্টিয়ারিং ধরেছে গাইঘাটার ক্লাস নাইনের গায়ত্রী


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial