নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে রাজ্যে। সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যেই রাজ্য বিজেপি-ক কোর কমিটির বৈঠক বসল। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই বৈঠকে নেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তবে সল্টলেকে উপস্থিত আছেন দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। নির্বাচন পরবর্তী হিংসার যে অভিযোগ উঠে আসছে বিভিন্ন জায়গা থেকে, সেই নিয়ে বৈঠকে আলোচনা চলছে বলে খবর। (West Bengal BJP)


শনিবার রাজ্য বিজেপি-র কোর কমিটির বৈঠকে উপনির্বাচনের প্রার্থী নিয়েও আলোচনা চলছে বলে খবর।  বৈঠকে রয়েছেন সুকান্ত মজুমদার, লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পাল শান্তনু ঠাকুররা। তাই শুভেন্দুর এই অনুপস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তৃণমূলের কুণাল ঘোষও। তাঁর বক্তব্য, "ভোটে হেরে বিজেপির ভিত নড়ে গিয়েছে। কলকাতার বৈঠক এড়াতেই কোচবিহারে শুভেন্দু অধিকারী।"


লোকসভা নির্বাচনে এবার বাংলায় ৩০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও, কোনও রকমে দুই সংখ্যায় পৌঁছতে সফল হয়েছে বিজেপি। সেই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যেমন কাটাছেঁড়া চলছে, বিজেপি-র অন্দর থেকেও দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপের সুর শোনা গিয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর এই প্রথম রাজ্য বিজেপি-র কোর কমিটির বৈঠক। এই কোর কমিটিতে মোট ২০ জন পদাধিকারী রয়েছেন, পাশাপাশি, চার জন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক এবং সহ-পর্যবেক্ষক রয়েছেন। 


আরও পড়ুন: NEET Controversy: কেউ লিখে দেন ব্ল্যাঙ্ক চেক, মাথাপিছু ৬৬ লক্ষও! NEET দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ায় অভিযুক্ত কেন্দ্র


এই কোর কমিটির সদস্য হয়েও যাঁরা আজকের বৈঠকে যোগ দেননি, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শুভেন্দু এবং মিঠুন চক্রবর্তী। শ্যুটিং নিয়ে ব্যস্তার দরুণ এমনিতেই এই কোর কমিটির বৈঠকে সেভাবে দেখা যায় না মিঠুনকে। কিন্তু শুভেন্দু বরাবরই উপস্থিত থাকেন। এমনিতে প্রতি মাসে কোর কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও, নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর শনিবারই প্রথম কোর কমিটির বৈঠক ছিল রাজ্য বিজেপি-র। কিন্তু সেখানে শুভেন্দুকে দেখা গেল না।


শুভেন্দুর অই অনুপস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি, অমিত শাহের নির্দেশে কোচবিহারে ভোট পরবর্তী হিংসা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়েছেন শুভেন্দু। কোচবিহারে নিশীথ প্রামাণিকের গণনায় যে কারচুপির অভিযোগ উঠছে, সেই নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে গিয়েছেন তিনি।


কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়ার পর আজ কলকাতায় এসে বৈঠকে যোগ দিয়েছেন সুকান্ত, শান্তনু। নির্বাচনে পরাজিত হয়েও বৈঠতে যোগ দিয়েছেন অগ্নিমিত্রা, লকেটরা। উপনির্বাচনের প্রার্থী ঠিক করে নেওয়া থেকে দলীয় কর্মীদের জন্য রাজ্য বিজেপি-র তরফে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেই নিয়ে আলোচনা রয়েছে। তাই ওই বৈঠকে শুভেন্দুর অনুপস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে। 


কারণ লোকসভা নির্বাচনের ফল সামনে আসার পর থেকেই বিজেপি-র অন্দরে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। নির্বাচনের ঠিক আগে কেন্দ্রবদল নিয়ে প্রকাশ্যে রাজ্য নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন দিলীপ। কম ব্যবধানে জিতেও সুকান্ত কী করে মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেলেন, সেই নিয়েও শোনা গিয়েছে ক্ষোভের সুর। শুভেন্দু নিজেও দলের ফল নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। ভাল হলে কৃতিত্ব নিতে সকলে ঝাঁপিয়ে পড়েন, আর খারাপ হলে তাঁর কাঁধে দায় এসে পড়ে বলে মন্তব্য করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি শুধু প্রচারে যান, সংগঠনে হস্তক্ষেপ করেন না বলেও কার্যত হাত তুলে নেন শুভেন্দু। 


এই সবের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলীপ এবং শুভেন্দুর অনুগামীরা, পরস্পরের বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে নেমে পড়েন। দিলীপ রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন বিজেপি রাজ্যে ১৮টি আসন পেয়েছিল বলে যেমন দাবি করেন দিলীপের অনুগামীরা, তেমনই শুভেন্দুর অনুগামীরা আবার বর্ধমান-দুর্গাপুরে জিততে না পারা নিয়ে খোঁচা দেন দিলীপকে। তাই কোর কমিটির বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।