সন্দীপ সমাদ্দার, অরিত্রিক ভট্টাচার্য, আশাবুল হোসেন: তৃণমূলে ইন্দ্রনীল সেন এবং বাবুল সুপ্রিয়ের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব একসময় খবরের শিরোনামে উঠেছিল। এবার বিজেপি-র হিরণ চট্টোপাধ্যায় এবং রুদ্রনীল ঘোষের মধ্যে লড়াইয়ের খবরে তপ্ত রাজনীতি। প্রশ্ন উঠছে,  তৃণমূলের গায়কদের পর এবার বিজেপির নায়কদের মধ্য়েও কি দ্বন্দ্ব শুরু হল? আর এই প্রশ্ন উস্কে দিয়েছেন খোদ হিরণ এবং রুদ্রনীল।


হিরণ এবং রুদ্রনীল, দু'জনই অভিনেতা, আবার দু'জনেরই রাজনৈতিক পরিচয়ও একই। বঙ্গ বিজেপি-তে তাঁদের বেশ দাপট এবং প্রভাব রয়েছে বলে শোনা যায়। এহেন হিরণ এবং রুদ্রনীলের মধ্যেই প্রকাশ্য তরজা শুরু হল। এক দিকে, রুদ্রনীল 'চোরেদের সঙ্গে যুক্ত' বলে মন্তব্য করলেন হিরণ। অন্য দিকে, তার পাল্টা চিটফান্ড সংস্থার মালিকের সঙ্গে হিরণের সংযোগ তুলে ধরলেন রুদ্রনীল।


রুদ্রনীল এবং হিরণ, দু'জনই তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে গিয়েছেন। বঙ্গ বিজেপি-তে নিজেদের জায়গাও গড়ে তুলেছেন। কিন্তু বর্তমানে পরস্পরকে তীব্র আক্রমণ করতে নেমেছেন তাঁরা। রুদ্রনীলের প্রতি আক্রমণ শানিয়ে হিরণ বলেন, "রুদ্রনীলের তো পরের পর সিনেমা আসছে। তিনি যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁরা ওঁকে নিশ্চয়ই এখন সিনেমায় সুযোগ দিচ্ছেন। উনি চোরেদের সঙ্গে কাজ করছেন। ওঁকে সংসার চালাতে হবে একজন অভিনেতা হিসেবে। উনি প্রত্যক্ষ ভাবে নয়, পরোক্ষ ভাবেই চোরেদের সঙ্গে যুক্ত।" 


আরও পড়ুন: Udayan Guha : বাড়ি থেকে 'বের করে পেটানো'র হুমকি উদয়ন গুহর, নিশানায় নিশীথ ?


সেখানেই থামেননি খড়্গপুর সদরের বিধায়ক হিরণ। তাঁর বক্তব্য, "রুদ্রনীল তো অনেক ছবি করছেন এই মুহূর্তে। শ্রীকান্ত মোহতার ছবিতে উনি কাজ করছেন বা অন্য যাঁদের ছবিতে কাজ করছেন, তাঁরা তো আসলে চোর!" 


এর পাল্টা হিরণকে বেঁধেন রুদ্রনীল। চিটফান্ড সংস্থার মালিকের সঙ্গে তাঁর সংযোগের কথা তুলে ধরেন। রুদ্রনীলের বক্তব্য, "হিরণবাবু এর আগে একটি ছবি করেছিলেন, 'মাচো মস্তানা' বলে শুনেছিলাম আমরা। ২০১২-'১৩ হবে বোধহয়। রিমেক ফিল্মজের। পরে জানা যায়, রিমেক চিটফান্ডের যিনি মালিক, সেই পিপি তিওয়ারি ২০১২-'২৩ সালে প্রায় ৬-৭ কোটি টাকা দিয়েছিলেন।" এর পাল্টা হিরণ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে বলেন, "কে, কোন টাকায় ছবি করছে, তা অভিনেতার পক্ষে বাছা সম্ভব নয়। এটা দেখার কাজ পুলিশের। আর পুলিশমন্ত্রী নিজেই তো চোর!"


আবার হিরণ শ্রীকান্ত মোহতার নাম টেনে আনায় কেন্দ্রের কোর্টে বল ঠেলে দেন রুদ্রনীল। তিনি বলেন, "শ্রীকান্ত মোহতা কোনও একটি আইনি জটিলতায় জড়িয়েছিলেন। উনি যদি চোর হন, ওঁর চ্য়ানেল রয়েছে, প্রযোজনা সংস্থা রয়েছে, যা কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার সেগুলি বন্ধ করছে না কেন?"


তৃণমূলের ইন্দ্রনীল বনাম বাবুলের দ্বন্দ্ব নিয়ে এর আগে চর্চা শুরু হয়েছিল বঙ্গ রাজনীতিতে। বিধানসভায় দু'জনের মধ্যে তর্কাতর্কিও হয়। সেই তালিকায় এবার নয়া সংযোজন হিরণ এবং রুদ্রনীল। প্রকাশ্যে পরস্পরকে যেভাবে আক্রমণ করে চলেছেন তাঁরা, তাতে দলের অস্বস্ততি বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের অনেকে।