কলকাতা: উপনির্বাচনেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখল তৃণমূল। রায়গঞ্জ, মানিকতলা, বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণ, শনিবার এই চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়েছে। আর তাতে বিজেপি-র জেতা তিনটি আসনই ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ, বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। উপনির্বাচনে ওই তিনটি কেন্দ্রই তাদের থেকে ছিনিয়ে নিল জোড়াফুল শিবির। মানিকতলায় তৃণমূলই জয়ী হয়েছিল বিধানসভা নির্বাচনে। সাধন পাণ্ডের মৃত্যুতে সেখানে উপনির্বাচন হল, তাতেও জয়লাভ করল তারা। অর্থাৎ উপনির্বাচনে চারটি আসনেই হারল বিজেপি। (West Bengal By Election Results)
দুপুর ২.৩০ পর্যন্ত কমিশন যে হিসেব দিয়েছে, সেই অনুযায়ী,
- রায়গঞ্জে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে হেরে গিয়েছেন বিজেপি-র মানস কুমার ঘোষ। তিনি ৩৬ হাজার ৪০২ ভোট পেয়েছেন। কংগ্রেসের মোহিত সেনগুপ্ত হেরেছেন ৬৩ হাজারের বেশি ভোটে। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ২৩ হাজার ১১৬। কৃষ্ণকল্যাণী ৮৬ হাজার ৪৭৯ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
- রানাঘাট দক্ষিণে মুকুমণি ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৩৩ ভোট পেয়েছেন। বিজেপি-র মনোজ বিশ্বাস পেয়েছেন ৭৪ হাজার ৪৮৫ ভোট। সিপিএম প্রার্থী অরিন্দম বিশ্বাস ১৩ হাজার ৮২ ভোট পেয়েছেন।
- বাগদায় মধুপর্ণা ১ লক্ষ ৭ হাজার ৭০৬ ভোট পেয়েছেন। বিজেপি প্রার্থী হিনয় বিশ্বাস ৭৪ হাজার ২৫১ ভোট পেয়েছেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের গৌর বিশ্বাস ৮ হাজার ১৮৯ ভোট পেয়েছেন উপনির্বাচনে।
- মানিকতলায় ৬২ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন সুপ্তি। বিজেপি-র কল্যাণ চৌবে ১৫ হাজার ১৭৯ এবং সিপিএম-এর রাজীব মুজমদার ৭ হাজার ১০১ ভোট পেয়েছেন।
এদিন গণনা শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তৃণমূলের জয়ী হতে চলেছে বলে ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যায়। ফলাফল সামনে আসার পর এদিন বিজেপি-কে কটাক্ষ করেন কুণাল। মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবেকে কটাক্ষ করে বলেন, "কল্যাণ চৌবে যত ভোটে হারবেন, তত রসগোল্লা পাঠাব ওঁর বাড়িতে।" সন্দেশখালি থেকে জয়ন্ত সিিনহা, শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে মারাত্মক সব অভিযোগ উঠলেও, মানুষ তৃণমূলের উপর আস্থা রেখেছেন বলে জানান কুণাল। তাঁর কথায়, "বাম জমানা এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির চেয়ে ভাল আছেন বাংলার মানুষ। বিজেপি-র প্রতি আস্থা নেই তাঁদের। তৃণমূল ভূল স্বীকার করেছে বলেই মানুষ আস্থা রেখেছেন।" যদিও বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "একটু অপেক্ষা করুন। পরিস্থিতি পাল্টাবেই।"
উপনির্বাচনের এই ফলাফলের পর রাজ্য বিধানসভায় আরও ক্ষমতা বাড়ল তৃণমূলের। এর আগে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ২১৩টি আসনে জয়ী হয়। বিজেপি জয়ী হয় ৭৭টি আসনে। ISF-এর নৌশাদ সিদ্দিকি এবং নির্দল প্রার্থী একটি করে আসনে হন। ২০২১ সালের নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের শামসেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরের প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে সেখানে ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল। পরে ওই দুই আসনে জয়ী হলে তৃণমূলের আসন বেড়ে ২১৫ হয়।
তবে সেখানেই শেষ নয়, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র টিকিটে জয়ী হয়ে তৃণমূলে চলে আসেন অনেকে। মুকুল রায় এঁদের মধ্যে অন্যতম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে জোড়াফুলের পতাকা নিয়ে জোড়াফুল শিবিরে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি কোন দলে, সেই নিয়ে বিধানসভায় যদিও জট অব্যাহত। এর পাশাপাশি, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়া জুন মালিয়া, পার্থ ভৌমিক, হাজি নুরুল ইসলামের মতো অনেককে লোকসভায় প্রার্থী করে তৃণমূল, যাঁরা জয়ীও হয়েছেন। ফলে সেই বিধানসভা আসনগুলি খালি পড়ে রয়েছে।