জয়নগর: বিলকিস বানো ধর্ষণ কাণ্ডে সুপ্রিম রায় নিয়ে এবার মহুয়া মৈত্রের উল্লেখ শোনা গেল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। মঙ্গলবার জয়নগরের প্রশাসনিক সভা থেকে বিলকিস বানো মামলার প্রসঙ্গ তোলেন মমতা। সেখানেই মহুয়ার প্রশংসা শোনা যায় মমতার মুখে। তিনি জানান, বিলকিসের ধর্ষকদের ছেড়ে দেওয়া নিয়ে মহুয়াই মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় জয় মিলেছে, যা একপ্রকারে তৃণমূলেরও জয়। 


একদিন আগেও বিলকিসের ধর্ষকদের ছেড়ে দেওয়ার মামলা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন মমতা। এদিনও জয়নগরের প্রশাসনিক সভায় বিষয়টির উল্লেখ শোনা গেল তাঁর মুখে। এদিন মমতা বলেন, "বিলকিস বানোর মামলায়, ধর্ষকদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের দলের মহুয়া মৈত্র, যিনি সাংসদ ছিলেন, জোর করে যাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই মামলা কিন্তু তিনি করেছিলেন। মামলায় একটি পক্ষ ছিলেন তিনি। এটা কিন্তু তৃণমূলের বিরাট জয়।"


বিলকিস মামলার প্রসঙ্গে মমতা আরও বলেন, "আমরা ধর্ষকদের প্রশ্রয় দিই না। মানুষকে বিচার দিই আমরা। কেউ কেউ বলে বেড়াচ্ছে, আমি নাকি গুন্ডাদের নেতা! সারাজীবন মানুষের কাজ করে এলাম। আমি মানুষের নেতা, নেতা নই আমি কর্মী। মানুষ আমার নেতা। আমি মানুষের পাহারাদার। কেউ বিপদে পড়লে, আপনাদের বলতে হয় না, আমরা ছুটে যাই।"


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: মোটা হবেন বলে খান না নিজে, জয়নগর থেকে মোয়ার হাব তৈরির ঘোষণা মমতার


২০০২ সালের গোধরায় সবরমতী এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের পর গুজরাত জুড়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বিলকিস। কোলের সন্তান এবং পরিবারের মোট ১৫ সদস্যের সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ৩ মার্চ ধূ ধূ জমি ঘিরে গজিয়ে ওঠা ঝোপের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই সময় কাস্তে, তলোয়ার, লাঠি নিয়ে ২০-৩০ জনের দল তাঁদের উপর চড়াও হয়। গণধর্ষণের শিকার হন বিলকিস। বিলকিসের চোখের সামনে পরিবারের সাত সদস্যকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। খুন করা হয় বিলকিসের শিশু সন্তানকেও। কোনও রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে পালান ছ’জন।


সেই মামলাতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ১১ জনকে গত বছর স্বাধীনতা দিবসে, গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুক্তি দেয় গুজরাত সরকার। জেলের বাইরে বেরোতে গলায় মালা পরিয়ে, মিষ্টিমুখ করিয়ে, ধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানানো হয় সকলকে। এর পর দফায় দফায় সংবর্ধনাও দেওয়া হয় দোষীদের। সেই নিয়ে প্রশ্ন তুললে, পাল্টা সাফাই দিয়ে জানানো হয়, জেলের ভিতর সকলের ভাল আচরণ ছিল। ব্রাহ্মণ সন্তান, ভাল ঘরের ছেলে বলেও দোষীদের প্রশংসায় ভরিয়ে দেন গুজরাতের বিজেপি বিধায়ক।


গুজরাত সরকারের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা রূপরেখা বর্মা, সিপিএম-এর সুভাষিণী আলি, সাংবাদিতক রেবতী লাউল। এর পর আদালতের দ্বারস্থ হন বিলকিস নিজে। তখনও সংসদপদে আসীন ছিলেন মহুয়া। তিনিও পৃথক জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন শীর্ষ আদালতে। প্রাক্তন আইপিএস অফিসার মীরন চাড্ডাও আদালতে যান। সেই প্রসঙ্গ তুলেই এদিন মহুয়ার প্রশংসা করলেন মমতা।