কলকাতা: পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ফের রাজনৈতিক তরজা চরমে। মুখোমুখি শাসক বনামব প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। এবার নেপথ্য কারণ পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন। বঙ্গভঙ্গের যন্ত্রণাময় ইতিহাস নিয়ে আনন্দ-আয়োজনের তীব্র বিরোধিতা করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন, দিয়েছেন চিঠিও। কিন্তু সেই নিয়ে তাঁকে তীব্র আক্রমণ করেছে বিজেপি। 


মমতার আপত্তি সত্ত্বেও মঙ্গলবার রাজ্যসভায় পালিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ দিবস। বিধানসভা থেকে আলাদা করে মিছিল বের করেছে বিজেপি। সেই আবহেই এদিন সকালে মুখ খোলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। নিউটাউনে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে সরাসরি মমতাকে নিশানা করেন তিনি। 


সংবাদ মাধ্যমে এ দিন দিলীপ বলেন, "স্বাধীনতার আগে বাংলায় যখন প্রথম সরকার হয়, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তাতে মন্ত্রী ছিলেন। সেই সময় সরকারে থাকা হিন্দু বিধায়করা পশ্চিমবঙ্গ তৈরির জন্য ভোট দিয়েছিলেন। বঙ্গভঙ্গের পর হিন্দু প্রধান অংশ নিয়ে তৈরি হয় পশ্চিমবঙ্গ।  জ্যোতি বসুরা পর্যন্ত হিন্দু বাংলা তৈরি করতে ভোট দিয়েছিলেন। মোট ২০ জনের ভোট পড়ে। তখন থেকেই পশ্চিমবঙ্গের ধারণা তৈরি হয়। দেশভাগ হয় তার পরে।"


আরও পড়ুন: West Bengal Foundation Day: পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন, বিধানসভা থেকে মিছিল BJP-র, মমতাকে আক্রমণ শুভেন্দুর


দিলীপের মতে, "পশ্চিমবঙ্গ তৈরি হওয়ার একটা দিন রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিহাস ঘেঁটে দিতে চাইছেন। এটা ঐতিহাসিক সত্য। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন বলে হিন্দু বাঙালিরা মাতৃভূমি পেয়েছেন। নাহলে সবাই উদ্বাস্তু হয়ে যেতেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপত্তি জানানোর কে? উনি আজ আছেন, কাল থাকবেন না। ইতিহাস থেকে যাবে। উনি নিজে একদিন ইতিহাস হয়ে চলে যাবেন। তাই এসব চেষ্টা যেন না করেন উনি। "


পশ্চিমবঙ্গ দিবস বলে যে দিনটিকে ঘিরে এত আয়োজন, ১৯৪৭ সালের সেই ২০ জুন তৎকালীন অখণ্ড বাংলা বিভাজনের বিষয়টি রাজ্য বিধানসভায় উত্থাপিত হলে, বঙ্গভঙ্গের পক্ষে বেশি ভোট পড়ে। ফলে দু'টুকরো হয়ে যায় বাংলা। তৈরি হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) এবং একটি অংশ ভারতে রয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গ নামে। 


এর পর ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা অর্জন করে ভারত। কিন্তু সেই স্বাধীনতা অর্জিত হয় পঞ্জাব এবং বাংলা বিভাজনের মাধ্যমে। আজও সেই যন্ত্রণাময় ইতিহাস কুরে কুরে খায় শিকড় বিচ্ছিন্ন মানুষদের। ইংরেজ চলে গেলেও, তাদের টেনে যাওয়া বিভাজনের ক্ষত রয়ে গিয়েছে দগদগে হয়ে। তাই পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের সিদ্ধান্তে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।