কলকাতা: রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই নজিরবিহীন ঘটনা রাজ্যে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। অভিযোগ করেছেন রাজভবনে কর্মরতই এক মহিলা। স্থায়ী চাকরি এবং পদোন্নতির কথা দিয়ে রাজ্যপাল ওই মহিলাকে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠান এবং অশালীন আচরণ করেন বলে অভিযোগ। একবার নয়, দু'বার তাঁর শ্লীলতাহানি করেছেন রাজ্যপাল. এমনই অভিযোগ তুলছেন ওই মহিলা। (CV Ananda Bose)
বৃহস্পতিবার সন্ধেয় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। কলকাতা হেয়ার স্ট্রিট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন অভিযোগকারিণী। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগপত্রে মহিলা জানিয়েছেন, ২০১৯ সাল থেকে তিনি রাজভবনে কাজ করছেন। রাজভবনেরই হস্টেলে থাকেন। এ রাজ্যেরই বাসিন্দা ওই মহিলা। এযাবৎ রাজভবনের একাধিক বিভাগে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। (Kolkata Raj Bhavan)
লিখিত অভিযোগে ওই মহিলা জানিয়েছেন, সম্প্রতি এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে তুলে আনা হয় তাঁকে। এর পর রাজ্যপালের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ এবং কথা হয়। এর পর থেকেই রাজ্যপাল তাঁর সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ওই মহিলা। অভিযোগকারিণীর দাবি, গত সপ্তাহে তাঁকে চেম্বারে দেখা করতে বলেন রাজ্যপাল। সেই মতো চেম্বারে যান তিনি। কিন্তু সেখানে তাঁর সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন রাজ্যপাল। গায়ে হাত দেন।
আরও পড়ুন: CV Ananda Bose: রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ, থানায় রাজভবনেরই মহিলা কর্মী
ওই মহিলা জানিয়েছেন, রাজ্যপালের আচরণে ওই দিন অস্বস্তি বোধ করেন তিনি। হাত ছাড়িয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে চলে আসেন তিনি। সেই সময় বিষয়টি কাউকে না জানালেও, আজ পুলিশের কাছে অভিযোগপত্রে তার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন অভিযোগকারিণী। তিনি জানিয়েছেন, এর পর বৃহস্পতিবার আবারও তাঁকে ডেকে পাঠান রাজ্যপাল। চাকরিতে পদোন্নতি এবং স্থায়ী নিযুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে ডেকে পাঠান।
অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, আগের অভিজ্ঞতা থেকেই এদিন একা রাজ্যপালের চেম্বারে যেতে অস্বস্তি বোধ করছিলেন তিনি। তাই একজন সুপারভাইজারকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যপালের চেম্বারে ঢোকেন। কিন্তু দু'জনে চেম্বারে ঢুকলে সুপারভাইজারকে রাজ্যপাল বেরিয়ে যেতে বলেন। মহিলার সঙ্গে একা কথা বলতে চান বলে জানান। অভিযোগকারিণীর দাবি, সুপারভাইজার বেরিয়ে গেলে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলতে শুরু করেন রাজ্যপাল। তাঁর গায়ে হাত দেওয়ারও চেষ্টা করেন। অস্বস্তি বোধ করায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদ জানান তিনি। এর পর কাঁদতে কাঁদতে চেম্বার থেকে বেরিয়ে রাজভবনের সামনে পুলিশের পোস্টে গিয়ে অভিযোগ জানান। সেখান থেকে সঙ্গে সঙ্গে হেয়ার স্ট্রিট থানায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানেই লিখিত অভিযোগ জানান তিনি। আগের ঘটনারও বিবরণ দেন।
এ রাজ্যে সাংবিধানিক প্রধানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আগে কখনও ওঠেনি। স্বভাবতই বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্য় ছড়িয়ে পড়েছে। এমনিতে একাধিক বার বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে সংঘাত দেখা গিয়েছে রাজ্যপালের। রাজ্যপালের রাজনৈতিক অবস্থান, প্রশাসনিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এত মারাত্মক অভিযোগ কার্যতই নজিরবিহীন। তাই বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে। কিন্তু সাংবিধানিক পদে থাকায় রাজ্যপাল কিছু আইনি রক্ষাকবচ পান, তাই তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করায় বাধা রয়েছে। তাই আইনি পরামর্শ নিতে শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ।