কলকাতা: সন্দেশখালির ঘটনায় ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। কোথাও কোনও অনিয়ম দেখলেই মুখ খোলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের সেই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধেই এবার মারাত্মক অভিযোগ। রাজভবনের এক কর্মী তাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছেন। স্থায়ী নিযুক্তি এবং পদোন্নতির আশ্বাস দিয়ে রাজ্যপাল শ্লীলতাহানি করেন বলে অভিযোগ। এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন ওই মহিলা। কিন্তু রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্য়পালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা নিয়ে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। (CV Ananda Bose)


রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির লিখিত অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই লালবাজারে পাঠিয়ে দিয়েছে কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ। কিন্তু লিখিত অভিযোগ নিলেও, তার ভিত্তিতে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ বা মামলা করার নিয়ম নেই। সাংবিধানিক পদের অধিকারী দেশের রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালরা কিছু আইনি রক্ষাকবচের অধিকারী। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের বা ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষমতা নেই পুলিশের। তাই এক্ষেত্রে কী করণীয়, তা নিয়ে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে কলকাতা পুলিশ। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। (Kolkata Raj Bhavan)


এ নিয়ে আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল এবিপি আনন্দে মুখ খোলেন। তিনি জানান, সংবিধানের ৩৬১ এবং তার ২ নম্বর উপধারায় বলা রয়েছে, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপাল সাংবিধানিক পদাধিকারী। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত বা ফৌজদারি মামলা করা যাবে না। মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপালের বিরুদ্ধেও এমন একটি মামলা সামনে এসেছিল। সেখানকার হাইকোর্টও একথা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়। তাই অভিযোগকারিণী লিখিত অভিযোগ জানালেও, যেহেতু রক্ষাকবচ রয়েছে, তাই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারবে না পুলিশ।


আরও পড়ুন: CV Ananda Bose: পদোন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে দু’বার শ্লীলতাহানি, রাজভবনের কর্মীর সঙ্গে অশালীন আচরণ রাজ্যপালের?


আইনজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানের ৩৬১-এর ধারায় বলা রয়েছে, কর্মরত রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনও রকম ফৌজদারি মামলা শুরু করা যায় না। দেশের কোনও আদালতেরও এই ক্ষমতা নেই। রাজ্যপালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো যায় না, তাঁকে গ্রেফতার করা যায় না, মামলা দায়ের করা যায় না। কিছু ক্ষেত্র ছাড়া, সাধারণ ক্ষেত্রেও মামলা দায়ের করা যায় না সাংবিধানিক পদাধিকারীর বিরুদ্ধে। ফলে কলকাতা পুলিশ এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করতে পারেনি। আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বিষয়টিতে। 


পুলিশ সূত্রে খবর, সংবিধান যেহেতু রক্ষাকবচ দিয়েছে, এটা নিয়ে এখনই এগনোর কোনও সুযোগ নেই। তবে রাজ্য সরকারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরকেও জানানো হয়েছে বিষয়টি। গোটা অভিযোগ লিখিত আকারে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে জানানো যায় কি না, তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। পাশাপাশি, বিষয়টি নিয়ে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো যায় কি না, তা নিয়েও চিন্তা-ভাবনা চলছে। সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু দেশের আইনের রক্ষাকর্তা, সেক্ষেত্রে শীর্ষ আদালত থেকে কোনও নির্দেশ পাওয়া যায় কি না, তা নিয়েও কথা চলছে এই মুহূর্তে।