কলকাতা: আর জি কর কাণ্ডের আঁচ এখনও রয়েছে। সেই আবহেও পর পর নারী নির্যাতন, মেয়েদের উপর নৃশংস অত্যাচারের ঘটনা ঘটে চলেছে। সেই নিয়ে এবার রাজ্য  সরকারকেই কাঠগড়ায় তুললেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাঁর দাবি, সঠিক সময়ে পদক্ষেপ না করাতেই ধর্ষণেরমতো ঘটনা বেড়ে চলেছে। প্রতিকারের চেয়ে যে প্রতিরোধ ভাল, তা রাজ্যকে বুঝতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যপাল। (CV Ananda Bose)


আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় এখনও প্রতিবাদ, আন্দোলন চলছে। সেই আবহেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে আবার গৃহবধূকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কীটনাশক খাইয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। (West Bengal Governor)


সেই নিয়েই এবার রাজ্যের সমালোচনায় সরব হলেন রাজ্যপাল। তাঁর বক্তব্য, "আর জি কর মেডিক্যালে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেভাবে সব কিছু তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে, তাতে রাজ্যে এই ধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনা বার বার করে ঘটছে। সরকারের বোঝা উচিত, সঠিক সময়ে পদক্ষেপ করলে অনেক কিছু রক্ষা পায়।"


পর পর ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে রাজ্যপাল আরও বলেন, "সময় মতো ব্যবস্থা না নেওয়াতেই ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। এই জঘন্য অপরাধীদের জন্য কড়া পদক্ষেপ জরুরি। না হলে মনে হবে রাজ্য ধর্ষণ ও হিংসাকে উৎসাহ দিচ্ছে। এটা কোনও কৃতিত্বের ব্য়াপার নয়। সরকারের বোঝার এটাই সেরা সময় যে, প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ ভাল। বর্তমান সরকারের আমলে বাংলায় হিংসার কোনও প্রতিকার নেই বলে মনে হচ্ছে। অদ্ভুত ব্য়াপার।"


বিরোধী শিবির থেকেও এ নিয়ে রাজ্যের সমালোচনা করা হয়েছে। রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "এগুলিকে সামাজিক বিচ্যুতি বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আর দূরে থাকতে পারব না। চার দশকের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক সমাজের বাসিন্দা হয়ে গিয়েছি আমরা, বাধ্যতার সংস্কৃতির বাসিন্দা হয়ে গিয়েছে। এই ধরনের ঘটতে পারে, ধর্ষণের ঘটনা কাঙ্খিত না হলেও, ধর্ষণমুক্ত সমাজ ভাবা যায় না। কিন্তু পুলিশ কী করছে, কী শাস্তি হচ্ছে, বিকৃতমনস্ক মানুষদের ভয় পাওয়ানো যাচ্ছে কি মা, তা-ই আসল ব্যাপার। এই ধরনের ঘটনা ঘটছে কারণ হল সমস্ত দুষ্কৃতী আজ নিয়ন্ত্রণহীন সমাজে থেকে, আইনের শাসন না থাকায় ভয়মুক্ত হয়ে গিয়েছে। ভাবছে, সরকার তাদের, তাই পুলিশ কিছু করতে পারবে না।"


সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে যা চলছে, আমাদের মুখ দেখানোর সুযোগ কমে যাচ্ছে। ভয়াবহ। বাড়ছে। অপরাধীরা যেন মনে করছে, যা খুশি করতে পারে, কেউ কিছু করার নেই। আর জি কর নয় শুধু, নানা ঘটনার বিস্ফোরণ ঘটে আর জি করে। কিছু লাভ হল না। জয়নগরে বাচ্চা মেয়ে, এখন পটাশপুরে গৃহবধূ। কোথায় যাচ্ছি আমরা? কী করে এত সাহস পাচ্ছে? পার্ক স্ট্রিট থেকে ছোট ঘটনা বলা শুরু হয়। ধূপগুড়ি, কাকদ্বীপ, কামদুনি, হাঁসখালি...মেয়েটির চরিত্র চিত্রণ হয়ে গেল। কামদুনিতে সবাই কার্যত ছাড়া পেয়ে গেল। সরকার রাজনৈতিক মনোভাব নিয়ে এমন ভাবে চলল, যেখানে তদন্তে গন্ডগোল করা যায়, ধামাচাপা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা যায়। যারা করে তারা কলকাতার পুলিশ কমিশনার হয়। এতকিছুর পরও লজ্জা হচ্ছে না? এর শেষ কোথায়?"