কলকাতা : ক্রমশ ভয়াবহ চেহারা নিচ্ছে অ্য়াডিনো ভাইরাস ( Adenovirus ) । প্রাণ যাচ্ছে শিশুদের! খালি হচ্ছে মা-বাবার কোল ! বাড়ছে অ্যাডিনো আতঙ্ক ( Adeno Panic ) । পরপর শিশু মৃত্যু ঘটছে শহরে। জেলা থেকেও আসছে অ্যাডিনো উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর কবর। তার জেরে এবার শিশুচিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সব স্বাস্থ্যকর্মীর ছুটি বাতিল করা হল। সরকারি হাসপাতালে শিশুচিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সব স্বাস্থ্যকর্মীর ছুটি বাতিল করল রাজ্য। 



মঙ্গলবার স্বাস্থ্যদফতরের এই নির্দেশিকা প্রকাশিত হল। সরকারি হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে ফিভার ক্লিনিক। 
আরও একবার নির্দেশিকা দিয়ে জানাল স্বাস্থ্য দফতর। শিশুমৃত্যুর জেরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেই প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত, জানাল স্বাস্থ্যদফতর। 


গত ২ মাসে অ্যাডিনো ভাইরাস, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে, রাজ্যে ১১২ শিশুর মৃত্যুর হয়েছে। শুধুমাত্র রবিবার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত, মৃত্য়ু হয়েছে ৭ শিশুর! যে ৭ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ৪ জন নিউমোনিয়া ও ২ জন অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল, বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। পার্ক সার্কাসের ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক, তা পরিষ্কার একটা পরিসংখ্য়ানেই! 


বেসরকারি মতে, এখনও পর্যন্ত অ্যাডিনো ভাইরাস, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে, রাজ্যে  বহু শিশুর মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। শুধুমাত্র বি সি রায় শিশু হাসপাতালেই মৃত্যু হয়েছে ৪৫ শিশুর। কিন্তু, এভাবে আর কত মায়ের কোল খালি হবে? কোথায় গিয়ে থামবে এই সংক্রমণ? ভাবাচ্ছে সেই প্রশ্নটাই। এই পরিস্থিতিতেই রাজ্য সরকারি হাসপাতালে সব স্বাস্থ্যকর্মীদের ছুটি বাতিল করল রাজ্য । 

এর আগে রাজ্য সরকার অ্যাডিনো পরিস্থিতিতে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্বাস্থ্য-সচিব এবং মুখ্যসচিবের বৈঠক হয়। সূত্রের দাবি, সেই বৈঠকে উদ্বেগপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিডের সময় যেভাবে কাজ করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও যেন সেই রকম ব্যবস্থা করা হয়। অক্সিজেনের অভাব যাতে না হয় সেই বিষয়ে নজর রাখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনই, ১০ দফা অ্যাডভাইসরি জারি করে স্বাস্থ্য দফতর। তাতে বলা হয়, 



  • শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি আক্রান্ত শিশুদের জন্য ২৪ ঘণ্টার ক্লিনিক করতে হবে।

  • যে যে হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজে শিশু বিভাগ আছে, সেখানে আলাদা আউটডোর চালু করতে হবে। যাতে সাধারণ বর্হিবিভাগে এই সব রোগীদের অপেক্ষা করতে না হয়।

  • হাসপাতাল প্রধান বা অধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়া শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি আক্রান্ত শিশুদের রোগীকে রেফার করা যাবে না।

  • ভেন্টিলেটর ও অন্য সামগ্রী প্রস্তুত রাখতে হবে।

  • হাসপাতাল প্রধান, অধ্যক্ষ বা নার্সিং বিভাগের প্রধানকে নিজেদের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।

  • শিশু বিভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকা জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে লাগাতে হবে।

  • শিশুদের জনবহুল এলাকায় না নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে মাস্ক ব্যবহার করতে।

  • অ্যাডভাইসরিতে আরও বলা হয়েছে, হাসপাতালগুলিকে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

  • এই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ৫টি হাসপাতালকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের থেকে পরামর্শ নিতে হবে।

  • বেসরকারি হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।