পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা : নিয়োগ-দুর্নীতিকাণ্ডে (Recruitment Scam) সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার ৪ বছর আগেই সরকারি চাকরি-বিক্রির স্কুল খুলে ফেলেছিলেন OMR শিট মূল্যায়নকারী সংস্থা, নাইসা-র ভাইস প্রেসিডেন্ট নীলাদ্রি দাস। সূত্রের খবর, সরকারি চাকরির রীতিমতো রেট চার্ট বানিয়ে ফেলেছিলেন নীলাদ্রি ও তাঁর সঙ্গীরা।
সূত্রের খবর, প্রাথমিকে শিক্ষক পদে চাকরির রেট ছিল ১০ লক্ষ টাকা। মোটর ভেহিকলসে ইন্সপেক্টর পদে চাকরির জন্য ১২ লক্ষ, খাদ্য দফতরে ফুড সাব ইন্সপেক্টর পদে চাকরির জন্য ১১ লক্ষ, জেলাশাসকের দফতরে চাকরির জন্য ৭ লক্ষ, পরিবহণ দফতরের অন্যান্য পদে চাকরির জন্য ৫ লক্ষ, রাজ্য পুলিশে চাকরির জন্য ৮ লক্ষ, সিভিক ভলান্টিয়ারের জন্য ৩০ হাজার, সেনাবাহিনীতে চাকরির জন্য ১৩ লক্ষ ও পুরসভায় ক্লার্কের চাকরির রেট ছিল দেড় লক্ষ টাকা।
২০১৯-এর গোড়াতেই সরকারি চাকরি-বিক্রির রেট চার্টের কথা জানতে পারে সিআইডি। এরপরই রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের হাতে একে একে গ্রেফতার হয় নীলাদ্রি ও তাঁর ৯ সঙ্গী। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য জুড়ে শোরগোল শুরু হওয়ার প্রায় চার বছর আগে, ৯ জনের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে, ২০১৯-এর জানুয়ারি মাসে, পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থানায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে CID। ওই বছরের ৭ মার্চ, দিল্লি থেকে নীলাদ্রি ও তাঁর এক সহযোগীকে গ্রেফতার করে CID। কিন্তু পরের মাসেই কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে যান নীলাদ্রি।
কিন্তু কী ছিল তাঁর modus operandi? নীলাদ্রিকে গ্রেফতারের পর CBI সূত্রেও দাবি করা হচ্ছে, চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা টাকা দিতেন, তাঁদের নাম SSC-র মাধ্যমে জানানো হত নাইসার ভাইস প্রেসিডেন্ট নীলাদ্রিকে। এরপর তিনি ওয়েবসাইটে নম্বর বাড়িয়ে দিতেন। কিন্তু কমিশনের দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিকদের সুপারিশ অনুযায়ী অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠানোর পরও, ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে আরও কয়েকজনের নম্বর বাড়িয়ে দিতেন নীলাদ্রি। সেই জাল ছড়িয়ে ছিল বিভিন্ন জেলায়।
নিয়োগ-দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত, OMR শিট মূল্যায়নকারী সংস্থা নাইসা-র ভাইস প্রেসিডেন্ট নীলাদ্রি দাসের (Niladri Das) মোবাইল ফোনটিকে গোপন তথ্যের ভাণ্ডার বলে মনে করছে সিবিআই। এবার ওই ভাণ্ডারের হদিশ পেতে তৎপর কেন্দ্রীয় সংস্থা। CBI-এর দাবি, SSC কর্তাদের সুপারিশ অনুযায়ী, চাকরিপ্রার্থীদের তালিকা মেসেজ করে নাইসা-র কর্মীদের কাছে পাঠাতেন নীলাদ্রি। ওই কর্মীরাই সার্ভারে ঢুকে নম্বর কারচুপি করতেন। সেই মতো চাকরিপ্রার্থীর নম্বর বাড়ানো হত। CBI সূত্রে দাবি, চাকরিপ্রার্থীদের নামের বেশ কিছু তালিকা ও অ্যাডমিট কার্ডের রোল নম্বর পাওয়া গেছে নীলাদ্রির মোবাইল ফোনে। মিলেছে বেশ কয়েকজন SSC-এর এক আধিকারিকের ফোন নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট।নীলাদ্রির মোবাইল ফোনে লুকিয়ে থাকা তথ্য জানতে, আলিপুর আদালতের নির্দেশে তা সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন- যারা অধ্যাপক পদে চাকরি পেয়েছে, তাদের মার্কস ৬৫% ছিল না, শোভনদেবের নিশানায় বামেরা