মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান: বৈদুতিক চুল্লির চিমনি দিয়ে নয়, মৃতদেহ সৎকারের সময় দূষিত ধোঁয়া বেরিয়ে পড়ছে শ্মশানের বৈদুতিক চুল্লি ইউনিটের জানলা দিয়ে। দুর্গাপুরের বীরভানপুরে পুরসভার শ্মশানের ভয়ঙ্কর এক দূষণের শিকার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের মানুষ। অন্ধকার হলেই মাঝে মাঝে এই দূষিত ধোঁয়া গ্রাস করে বসছে গোটা এলাকাকে। পুরসভার মেয়াদ শেষ হয়েছে সম্প্রতি।  এহেন পরিস্থিতিতে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে শাসক দল।


আতঙ্কে দুর্গাপুরের বেশ কিছু এলাকা


ভয়ঙ্কর এক ঘটনার আতঙ্কে দুর্গাপুরের বেশ কিছু এলাকা। দুর্গাপুর পুরসভার ৪১নম্বর ওয়ার্ডের বীরভানপুরে রয়েছে মহাশ্মশান। দামোদরের কোল ঘেঁষে থাকা এই শ্মশান এখন দুর্গাপুরের কোকওভেন থানার অন্তর্গত বীরভানপুর গ্রাম, ডিপিএল টাউনশিপ সহ বেশ কিছু এলাকার বেশ কয়েক হাজার মানুষের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বীরভানপুরের এই মহাশ্মশানের গুরুত্ব বুঝে বাম পুরবোর্ডের সময় এই শ্মশানে দুটি বৈদুতিক চুল্লি করা হয়েছিল। যাতে করে মৃতদেহ সৎকার করতে সুবিধে হয়। সময়টা ছিল ২০০৭-এর ১৩ ফেব্রুয়ারী রাজ্যের তৎকালীন পুর ও নগরন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য্য এই দুটি বৈদুতিক চুল্লির উদ্বোধন করেন। একই সময়ে দুটি কোনওদিনই চলে না। একটি চললে অপরটি বন্ধ থাকে। এই দুটি চুল্লি এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয়দের কাছে। অভিযোগ, মাঝে মাঝে রাতের দিকে এই দুই চুল্লির একটি থেকে মৃতদেহ সৎকারের দূষিত ধোঁয়া চুল্লির পাইপ লাইনের ধাতব অংশ দিয়ে না বেরিয়ে চুল্লি ঘরের জানলা দিয়ে বেরিয়ে পড়ছে। অন্ধকারের এই ছবি লেন্সবন্দী হয়েছে। কালো ধোঁয়াতে ভরে যাচ্ছে শ্মশান চত্বরের অংশ। অভিযোগ রাতের অন্ধকারে এই কাজ হচ্ছে।


অনেকে অসুস্থ হয়েও পড়ছে


দূষিত এই ধোঁয়া গোটা এলাকাকে গ্রাস করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ, দরজা জানলা লাগিয়ে ঘরে বসে থাকতে হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এমনটাও অভিযোগও উঠছে এর জেরে অনেকে অসুস্থ হয়েও পড়ছে। দুর্গাপুর বীরভানপুর মহাশ্মশানের চুল্লি অপারেটর স্বীকারও করে নিয়েছেন এই অভিযোগের সত্যতা। এ ছাড়া বিকল্প কোনও পথ খোলা নেই বলে ঐ চুল্লি অপারেটরের সাফাই। দুর্গাপুরের বীরভানপুর মহাশ্মশানের দুটি বৈদুতিক চুল্লির মধ্যে এখন একটি চলছে। বাকি একটি বিকল হয়ে পড়েছে। শুধু দুর্গাপুর নয় বাঁকুড়া সহ আশপাসের বেশ কিছু এলাকা থেকে মৃতদেহ সৎকারের জন্য সাধারণ মানুষ দুর্গাপুরের বীরভানপুর মহাশ্মশানে আসেন মৃতদেহ সৎকার করতে, স্বাভাবিকভাবে এই শ্মশানের ওপর চাপ বাড়ে প্রতিনিয়ত।


মহাশ্মশানের আশেপাশের এলাকায় ভয়ঙ্কর দূষণ


এখন মাত্র একটি চুল্লিতে মৃতদেহ সৎকার হয়। অন্যটি বিকল থাকার জন্য, শ্মশানের বৈদুতিক চুল্লির অপারেটরের দাবি, যদি এই ধোঁয়া অনবরত চুল্লির ধাতব পাইপ লাইন দিয়ে বের করা হয়, তাহলে ফের বিপত্তি বাধঁতে পারে চালু বৈদুতিক চুল্লিতে। তাই চুল্লি ঘরের জানলা দিয়ে মৃতদেহ সৎকারের সময় ধোঁয়া বের করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প রাস্তা খোলা নেই তাঁদের কাছে। আর এর জন্য দুর্গাপুরের বীরভানপুর মহাশ্মশানের আশপাশ এলাকাগুলি ভয়ঙ্কর দূষণের শিকার হচ্ছে,মৃতদেহ সৎকারের দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে গেছে তাদের।এমনিতেই দাবিহীন মৃতদেহ সৎকারের সময় ঘরের দরজা জানলা বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকতে হয় শ্মশান লাগোয়া বীরভানপুর সহ আরো বেশ কিছু এলাকার মানুষকে। নতুন সংযোজন আবার এই ভয়ঙ্কর দূষণ। যা আগামী দিনে মারাত্মক ব্যাধি তৈরী করতে পারে বলে আশঙ্কা সব মহলে।


 নজরদারির  কি অভাব? এই প্রশ্নের উত্তর চাইছে বিরোধীরা


বেশ কয়েক মাস আগে টেন্ডার মারফত তৃণমূল পুর বোর্ড শ্মশানের দুটি বৈদুতিক চুল্লির মেরামতির কাজ করিয়েছিলেন। তারপরেও চুল্লির ব্যাধি আজও যায়নি। দুর্গাপুর পুরসভার তৃণমূল বোর্ড থাকাকালীন বেশ কয়েকবার বীরভানপুরের মৃতদেহ সৎকারের জন্য বৈদুতিক চুল্লি বিকল হয়েছে। অল্টারনেটিভ সিস্টেমে চুল্লিগুলি চালু রাখা হয়েছিল কিন্তু এতো কিছুর পরও দুটি চুল্লি খুব একটা বেশিদিন একভাবে চলেনি। আর যার কুফল এখন ভোগ করতে হচ্ছে দুর্গাপুরের বেশ কিছু অংশের মানুষজনকে। যদি চুল্লি মেরামতি করা হয়, তাহলে কেন সেই কাজ ঠিকঠাক ভাবে হচ্ছে না ? প্রশ্ন বিরোধীদের। তাহলে কি নজরদারির অভাব? এই প্রশ্নের উত্তর চাইছে বিরোধীরা।


আরও পড়ুন, 'বিরোধীরা ঘুগনিওয়ালা ক্যাডারদের চাকরি প্রার্থী হিসেবে পাঠিয়ে দিচ্ছে', বিস্ফোরক শান্তনু


সমালোচনার ঝড় বামেদের গলাতেও


বিজেপি জেলা সহ সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, 'দুর্গাপুর পুরসভা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টিকে দেখেনি আর এতে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।' সমালোচনার ঝড় বামেদের গলাতেও। সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের অভিযোগ, 'বাম আমলের সব জিনিস শেষ করে দিচ্ছে তৃণমূল সরকার।' মানুষের ভয়ঙ্কর সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে দুর্গাপুর পুরসভার প্রসাশক মন্ডলীর সদস্য রাখি তেওয়ারী জানান, 'খুব তাড়াতাড়ি এই বিষয়টি নিয়ে সদর্থক ভূমিকা নেবে দুর্গাপুর পুরসভার বর্তমান প্রশাসক মন্ডলী।'