অমিত জানা, পশ্চিম মেদিনীপুর: কথাতেই আছে বিশ্বাসে মিলায় মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। দাঁতনের কালীপুজো তেমন বিশ্বাসের ওপর ভর করে হয়। এই কালীপুজো কালীচন্ডী মায়ের পুজো বলেই পরিচিত। বাংলা - ওড়িশা সীমান্তে বাংলায় হিন্দু দেবী কালী মাতা ও লোকদেবী চন্ডীমাতার এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন দেখা যায়। দাঁতনের প্রাচীন কালীচন্ডী মন্দির প্রায় একশো কুড়ি বছরের ও বেশি প্রাচীন।
লোকশ্রুতি আছে, বহু দিন পূর্বে এক সাধক দাঁতনের কৃষ্ণপুর মৌজায় জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলে গভীর সাধনায় মগ্ন থাকতেন। তিনি পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে সাধনা করতেন। পরবর্তীকালে মনোহরপুরের রাজা রামচন্দ্র রায় বীরবর মন্দির নির্মাণ করে দেন। ১৮৯৫ - ৯৭ সালে দাঁতনের মুন্সেফ বিজয় কেশব মিত্র ওই স্থানে সাধকের ফেলে যাওয়া পঞ্চমুন্ডির আসন ও বিগ্রহপাথর ও কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু দেখতে পান। ১৮৯৭ সালে কলকাতা থেকে দাঁতনের মুন্সেফ হয়ে আসেন প্রখ্যাত লেখক ও দার্শনিক বাবু কৃষ্ণধন মুখোপাধ্যায় । কৃষ্ণধনের উদ্যোগে ও রাজা রামচন্দ্র রায় বীরবরের আন্তরিক সহযোগিতায় ১৯০০ সালের পরে কালীচণ্ডীর মন্দির নির্মাণ করা হয়।
ভক্তদের বিশ্রামস্থল ও মন্দিরের দেখভালের আয়ের উদ্দেশ্যে রাস্তার বিপরীতে দাঁতন এলাকার প্রথম হাটও স্থাপন করেন রাজা নিজেই। সেই সময় থেকেই হাট এখনও বসছে। মন্দিরের ফটকটি নির্মাণ করেন মুন্সেফ কৃষ্ণধন নিজে। এখনও মন্দিরের প্রধান ফটকে তাঁর নামাঙ্কিত শতবর্ষ প্রাচীন প্রস্তর ফলক রয়েছে। কথিত আছে পুকুর থেকে ছোট পাথরের নুড়ি তুলে নিয়ে এসে লাল সুতো সালুতে বেঁধে মাকে মনের কথা জানিয়ে মানত করলে সেই মনষ্কামনা পূর্ণ করেন মা। এবং সেই ছবিও দেখা গেল মন্দিরের গায়ে সারিবদ্ধ ভাবে বাঁধা লাল সালু। মানত করে বেঁধে রেখে দিয়ে গেছেন দূরদূরান্ত থেকে আশা মানুষজন।
দাঁতনের গবেষক সন্তু জানা জানান, প্রায় ১৯০০ সালে এই মন্দির স্থাপিত হয়। কালীমাতা ও চন্ডী মাতার মিলন সাধারণত দেখতে পাওয়া যায় না। এই মিলন এই মন্দিরকে ঘিরে একটা বিশেষ মাহাত্ম্য তৈরি করেছে। এই দেবীকে শুধু হিন্দু ধর্মের দেবী মান্যতা করছি তা নয় লোকবিশ্বাস লোকশ্রুতি সমস্ত কিছু এখানে লোক দেবতা হিসেবে তিনি ধরা দিচ্ছেন। তৎকালীন সময় যে সমস্ত দুর্যোগ ও অশান্তির থেকে রক্ষা করতেন এই জাগ্রত দেবী মা কালী চন্ডী।
স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন পন্ডা বলেন, তৎকালীন সময়ে এই এলাকার জঙ্গল ঘেরা ছিল । এক সাধু তপস্যা শুরু করেন সে সময়। সাধু কে স্বপ্নাদেশ হয় তার সামনে যে পাথরটি রয়েছে সে পাথরটি কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং সেই পাথরের মধ্যেই দেবী কালী চন্ডী রয়েছেন সেই স্বপ্নাদেশের পর পুজো শুরু করেন ওই সাধু। বলি প্রথা চালু ছিল। প্রত্যেকদিন পূজা হয়। মায়ের ভোগ হিসেবে নারকেল নাড়ুর পাশাপাশি পায়েস ভোগ নিবেদন করা হয়।