বিশ্বজিৎ দাস, খড়গপুর(পশ্চিম মেদিনীপুর) : চিকিত্‍সকের অভাবে বেহাল খড়গপুরের তিনটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আউটডোর খোলা থাকলেও, বন্ধ রোগী ভর্তি। সমস্যা যে হয়েছে, তা মেনে নিয়েছে প্রশাসন। এনিয়ে তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেছে বিজেপি। 


বেড রয়েছে। রয়েছে প্রাথমিক চিকিত্‍সার সমস্ত ব্যবস্থা। কিন্তু নেই চিকিৎসক ! এ ছবি পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরের তিনটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। একটি চাঙ্গুয়াল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অপর দুটি গোকুলপুর ও পপরআড়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের। অভিযোগ, চিকিত্‍সকের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে রোগী ভর্তি। আউটডোর খোলা থাকলেও, সেই পরিষেবাও ধুঁকছে। চরম সমস্যায় পড়ছেন আশপাশের বাসিন্দারা। অসুখ-বিসুখ হলে, হয় ছুটতে হচ্ছে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে। নয়ত, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে।


খড়গপুরের চাঙ্গুয়ালের বাসিন্দা চন্দন চক্রবর্তী বলেন, আশপাশে কোনও হসপিটাল না থাকার জন্য এখানে আসে লোকজন ভর্তির জন্য। সাধারণ মানুষেরা দুর্ভোগের মধ্যে আছে। অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাও বন্ধ। এখানে প্রাইভেট যানবাহন ভাড়া করে যেতে হয়। যা গরিবদের পক্ষে খুব সমস্যার। বি এম ও এইচ মাঝে মাঝে আসেন, কিন্তু তাঁকে দেখতে পাওয়া যায় না।


চাঙ্গুয়ালের অপর এক বাসিন্দা সুভাষচন্দ্র ঘড়াই বলেন, আগে বেড চালু ছিল, ডাক্তারবাবু থাকতেন। এখন ডাক্তারবাবু সপ্তাহে দু'দিন আসেন। এখন ডাক্তারবাবু থাকেন না, আর বেডেও চালু নেই। এটা এসটি, এসসি এলাকা। গরিব মানুষদের বসবাস এখানে। ডাক্তারবাবু সপ্তাহে দুদিন আসেন, আউটডোরটা খোলা থাকে ব্যাস আর কিছু নেই। রাতে অসুবিধা হলে আমাদের খড়গপুর অথবা মেদিনীপুর হাসপাতালে যেতে হয়।


সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তৈরি হয় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি। ২০১৮-এ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে চাঙ্গুয়াল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে ৩০ শয্যাবিশিষ্ট চিকিত্‍সাকেন্দ্র করা হয়। কিন্তু চিকিত্‍সা করবেন যিনি, তিনি কোথায় ? চিকিত্‍সকের অভাবে কার্যত ভেঙে পড়েছে চিকিত্‍সাকেন্দ্র। এনিয়ে তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিজেপি।   


বিজেপি খড়গপুর দু'নম্বর ব্লকের মণ্ডল সভাপতি নিতাই ভুঁইয়া বলেন, এলাকার সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যব্যবস্থা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত। যাই কিছু হোক না কেন মেদিনীপুর অথবা খড়পুর ছুটতে হয়। মানুষ অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে আছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এতটা জরাজীর্ণ পরিস্থিতি বিগতদিনে মানুষ দেখেনি। রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা, অপদার্থ তার জন্য এসব হচ্ছে।


এর পাল্টা পিংলার তৃণমূল বিধায়ক অজিত মাইতি বলেন, স্বাস্থ্য বন্দোবস্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময় যা হয়েছে, সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গ কেন ভারতবর্ষের কোনও অঙ্গরাজ্যে এ ধরনের ডেভেলপমেন্ট হয়নি। সমস্যা একটাই হচ্ছে, কিছু কিছু ডাক্তার আসছেন, যোগদান দিচ্ছেন আবার চলে যাচ্ছেন। থাকতে চাইছেন না। বিজেপির নেতাদের কথায় মাথা খারাপ করে কোনও লাভ নেই।


পশ্চিম মেদিনীপুর মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবনচন্দ্র হাঁসদা বলেন, কয়েকদিন আগে এক মেডিকেল অফিসার রেজিগনেশন দিয়েছেন। আর একজন মেডিকেল অফিসারের আত্মীয় মারা যেতে তিনি চলে যান। ওখানকার বি এম ও এইচ তিনি নিজে সামাল দিতে পারেননি। একদিন সমস্যা হয়েছিল, পরের দিন থেকে সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে। 


কবে আসবেন নতুন চিকিৎসক ? কবে থেকে মিলবে পরিষেবা ? তারই অপেক্ষায় রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।