অরিন্দম সেন, আলিপুরদুয়ার: নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, এমন অবস্থা সংসারের। তবু হাল ছাড়েননি তরুণ (youth)। অবশেষে আলিপুরদুয়ার (alipurduar) শহর সংলগ্ন দক্ষিণ মাঝেরডাবরি গ্রামের বাসিন্দা, বাপ্পা সাহার জেদের কাছে হার মানল দারিদ্র। ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা ইউপিএসসি (UPSC) পরিচালিত ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট (ISI) পরিচালিত পরীক্ষায় সর্বভারতীয় স্তরে দ্বিতীয় স্থান (second position) দখল করলেন তিনি। ছেলের রূপকথার সাফল্যের আনন্দে ভাসছে পরিবার, গোটা গ্রাম।


লড়াই চলছে...
দিনমজুর পরিবারের ২৩ বছরের যুবক বাপ্পা। বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি, মা গৃহবধু। এক ভাই, এক বোনের মধ্যে কৃতী এই যুবকই ছোটো। প্রাথমিকের পাঠ গ্রামের সরকারি বাংলা স্কুলে। তার পর স্থানীয় গোবিন্দ হাই স্কুল থেকে ৯১% মার্কস নিয়ে মাধ্যমিক পাশ। সেটা ২০১৪ সালের ঘটনা। একই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে ৯৪.৬% নম্বর নিয়ে ২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন বাপ্পা। এর পরের গন্তব্য কোচবিহার উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেও অধ্যবসায়ের ফল পাওয়া যায়। ৮৯.৫ % নম্বর পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকের লেখাপড়া শেষ করেন ২০২০ সালে। গোল্ড মেডেলিস্ট ছিলেন তরুণ। দারিদ্রের সঙ্গে লড়ে এর পর নয়াদিল্লির ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউটে স্নাতকোত্তরের জন্য ভর্তি হন। সেখানেই  সর্বভারতীয় স্তরে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ২০২১-এর জুন মাসে, প্রথম বার ইউপিএসসি-র ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসক্যাল সার্ভিসের পরীক্ষা দেন। মূলত অভিজ্ঞতার জন্যই পরীক্ষায় বসা। কিন্তু গত ২৮-শে ডিসেম্বর অর্থাৎ বুধবার তার ফল বেরোলে দেখা যায়, ইউপিএসসি-এর ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিসে গোটা দেশে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন বাপ্পা। খবর ছড়িয়ে পড়তেই আবেগে ভাসছে বাপ্পাসহ তার পরিবার।


আনন্দের জোয়ার...
খবর ছড়াতেই খুশির হাওয়া আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন মহলে। নেতা থেকে মন্ত্রী, সকলেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাপ্পার নিজের স্কুলও সংবর্ধনা দিয়েছে। শত বাধা পেরিয়ে নিজে কী মনে করছেন কৃতী? তরুণের কথায়, 'দিনমজুর পরিবারে আর্থিক অনটন ছিল। তবে তা বাধা হতে পারেনা। পরিশ্রমী আর নিষ্ঠাবান হতে হবে। তবেই সাফল্য আসবে।' পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে মা-বাবাকে খুশি করতে পারায় অনেকটাই তৃপ্তি বাপ্পার। এবার  অ্যাসিস্ট্য়ান্ট ডিরেক্টর পদে যোগদান করে ভারত সরকারের হয়ে কর্মজীবনে নিজের পরিসংখ্যানগত জ্ঞান বিতরণই মূল লক্ষ হবে তাঁর,  জানান বাপ্পা।


আরও পড়ুন:'ববিতা নন, চাকরির প্রকৃত দাবিদার অনামিকা' দাবি জানিয়ে আদালতে দায়ের মামলা