ভারতে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয় প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে। এদের মধ্যে অনেকেরই অনুপ্রেরণামূলক কাহিনি রয়েছে। কিন্তু কেরালার আইএএস প্রার্থী লতিশা আনসারির দৃঢ় সংকল্পের কাছে সমস্ত পরীক্ষার্থীর সাহস ও স্বপ্ন যেন খানিক হলেও ম্লান হয়ে যায়। সর্বক্ষণ অক্সিজেন সিলিন্ডারের উপর নির্ভর করে থাকা এই মহিলা অদম্য জেদে সেই অক্সিজেন সাপোর্ট নিয়েই বসেছিলেন ইউপিএসসি পরীক্ষায়। মাত্র ২৭ বছরেই মৃত্যু হয় তাঁর, তবে মৃত্যুর ২ বছর আগে অদম্য জেদে তিনি ইউপিএসসির প্রস্তুতি নিয়ে এই পরীক্ষায় বসেন।
জন্ম থেকেই বিরল হাড়ের রোগ আর ফুসফুসের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ছিল লতিশার। ঠিক করে দাঁড়িয়ে থাকতে বা হাঁটতেও পারতেন না ভাল করে। লতিশার বাবা সবসময় তাঁর পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। মেয়ের প্রতি অসম্ভব যত্ন করেছিলেন তিনি এবং তাঁকে স্কুল-কলেজে ভর্তি করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তাঁর বাবাই।
দৃঢ়চিত্ত লতিশা একের পর এক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেতে থাকেন, তাঁর বাবার বুক ভরে ওঠে গর্বে। আর তারপর থেকেই ভারতের কঠিনতম পরীক্ষা ইউপিএসসির জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার স্বপ্ন দেখেন লতিশা। এক ভয়াবহ অসুস্থতায় ভুগছিলেন লতিশা যা তার ফুসফুসকে প্রভাবিত করেছিল, আর শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য তাঁকে সবসময় অক্সিজেনের সাহায্য নিতে হত। সর্বক্ষণ অক্সিজেন সাপোর্টে থাকতে হত তাঁকে। তাঁর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এতদিনে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছেড়ে দিত সবকিছুর। কিন্তু লতিশা ছিলেন একজন সাহসী নারী। তিনি কোনও বাধাকে বড় না মেনে প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই আইএএস হওয়ার পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। এমন একজন সরকারি কর্মী হতে চেয়েছিলেন তিনি যার মাধ্যমে তিনি অসংখ্য মানুষের সেবা করতে পারেন।
২০১৯ সালে লতিশা তাঁর পরিবারের সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে যান। পরীক্ষার উপরেই তাঁর সম্পূর্ণ মনোযোগ ছিল। অক্সিজেন মেশিন তার পাশে রেখে দেওয়া ছিল, সেই মেশিন ঠিকমত কাজ করত আর তিনি পরীক্ষায় কঠিন কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতেন। আর এভাবেই তিনি প্রমাণ করেছেন যে আপনার সীমাবদ্ধতা বা প্রতিকূলতাই নয় বরং আপনার অধ্যবসায়ই একমাত্র আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
তাঁর চিকিৎসার সময় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে বহুবার। আর চিকিৎসার সময় লতিশা তাঁর বাবাকে জানিয়েছিলেন যে তিনি কখনও দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি, তাঁকে যেন একবারের জন্য হলেও দাঁড়াতে সাহায্য করা হয়। আর এই অনুরোধ রাখতে তাঁর বাবা তাঁর হাত ধরে দুই ঘণ্টা যাবৎ তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করেন। আর জীবনের সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে এটাই ছিল লতিশার শেষ জয়। ২০২১ সালের ১৬ জুন মাত্র ২৭ বছর বয়সে লতিশার মৃত্যু হয়। আর আজও তাঁর কথা স্মরণে রেখে বহু প্রতিবন্ধী প্রার্থী হাল না ছাড়ার দৃপ্ত স্লোগানে উদ্বুব্ধ হয়ে ওঠেন।
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI