কলকাতা: উত্তরপ্রদেশের আমরোহায় একটি চাষি পরিবারে জন্ম। জন্মের প্রথম বছরটা পৃথিবীকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এর পরই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন । চিকিৎসকের কাছে যেতে এমন ইনজেকশন দেন, চোখটাই নষ্ট হয়ে যায়। পরিবারের সকলে মিলে বিভিন্ন জায়গায় ছেলেকে নিয়ে যান। দৃষ্টি ফেরানোর শত চেষ্টা করেন। কিন্তু অপটিক নার্ভ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।ফলে দৃষ্টি ফেরেনি।
চোখ কাড়ল নিউমোনিয়া
জীবনের গোড়াতেই এমন ঘটনাকে অনেকেরই বড় বাধা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু তেমনটা মনে করেননি সতেন্দর সিং। হার মানেননি তিনি। কারণ ওই বয়স থেকেই তার অদম্য জেদ ও পড়াশোনার প্রতি ভালবাসা রীতিমতো অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো। কিছু বছর আগেই তিনি ভারতের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা UPSC পাশ করেন সফলভাবে। গোটা দেশে ৭১৪ র্যাঙ্ক করেন সতেন্দর। কেমন ছিল তাঁর ছাত্রজীবন ? কীভাবেই বা একের পর এক কঠিন বাধা পেরিয়ে এতদূর এলেন।
দৃষ্টিহীন অবস্থাতেই অধ্যাপনা !
চোখের দৃষ্টিশক্তি নানা সময় নানা সমস্যার মুখে পড়েছেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি সতেন্দর। ছোট থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন। সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। তাঁর কথায়, সেভাবে ইংরেজি বলতে পারতেন না তিনি। দিল্লিতে চলে আসার পর দেশের অন্যতম বিখ্যাত কলেজ সেন্ট স্টিফেন কলেজ থেকে পড়াশোনা করেন। সেখানেই ইংরেজি বলতে শেখেন তিনি। সতেন্দরের কথায়, কলেজের পরিবেশ তাঁকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। এর পর দেশের আরেক বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন। পড়াশোনার মেধাই তাকে স্থান করে দেয় শিক্ষাক্ষেত্রে। শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপনা শুরু করেন সতেন্দর। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন পড়িয়েছিলেন তিনি। এরপর অরবিন্দ সান্ধ্য কলেজের সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন সতেন্দর।
একটি ঘটনাই জীবন বদলে দেয়
সতেন্দর বিশ্বাস করেন, মানুষের সঙ্গে যা হয়, তার কিছু না কিছু গুরুত্ব রয়েছে জীবনে। সেই মুহূর্তে তা বুঝতে না পারলেও পরে তা বুঝে ওঠা সম্ভব হয়। এই নীতি নিয়েই তিনি সারা জীবন এগিয়েছেন। কিন্তু কীভাবে তিনি পড়াশোনা করতেন? একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, একবার বাসে যেতে যেতে তাঁর কাকা এক ছোট বাচ্চার হাতে একটি বিশেষ ঘড়ি দেখতে পান। সেই ঘড়িটি আসলে দৃষ্টিহীনদের জন্য বিশেষ করে বানানো। ওই খুদেটির মুখেই তার ব্রেইল স্কুলে পড়ার কথা জানতে পারেন সতেন্দরের কাকা। প্রসঙ্গত, সতেন্দরের পরিবার এই ধরনের স্কুলের ব্যাপারে জানতেন না। কিন্তু সেদিনের ওই ঘটনাই সতেন্দরের জীবন পাল্টে দেয়।
সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতি
শুধুই কি ব্রেইলে পড়াশোনা করতেন সতেন্দর? নাহ! সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি কিছুটা উন্নত পদ্ধতিতেই নিয়েছেন তিনি। অধ্যাপক পদে থাকাকালীন তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। এর জন্য তিনি একটি স্ক্রিন রিডিং সফটওয়্যার ব্যবহার করতেন। সেটি দিয়েই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য বই পড়তে শুরু করেন। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় খবরের কাগজও পড়তেন এর সাহায্যে। অধ্যাপনার পাশাপাশি প্রস্তুতি নিতে নিতে ইউপিএসসি পরীক্ষাতেও কাঙ্খিত সাফল্য পান। সতেন্দরের কথায়, বিষয়টি আগে ভাল লাগছে কি না তা দেখা জরুরি। ভাল লাগলে প্রস্তুতির অনেকটাই হয়ে যায়। পাশাপাশি, তার কথায়, অনেক আগে খুব বেশি চাপ নিলে পরীক্ষা দিতে গিয়ে অনেক কিছু ভুলে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে। তাই সবসময় চাপমুক্ত থাকা দরকার। ২০১৯ সালে ক্রমতালিকায় ৭১৪ নম্বরে ছিল সতেন্দরের নাম। IAS।
আরও পড়ুন: Eczema treatment: একজিমা থেকে কি রেহাই মেলে ? কী এর চিকিৎসা
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI