এই পরিস্থিতিতে 'ডিজিটাল টেকনোলজির মাধ্যমে ডিসট্যান্স মোডে' ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর উদ্যোগ নিল যাদবপুর। যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের পর্যাপ্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বা স্মার্টফোন নেই, তাদের জন্যও রইল বিশেষ ভাবনা। ঠিক কী এই 'ডিসট্যান্স মোডে' পড়াশোনা? ছাত্রছাত্রীদের জন্য থাকছে কী কী বিশেষ ব্যবস্থা? কী করে হবে প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস? এবিপি আনন্দকে জানালেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস।
আপাতত স্নাতক স্তরে ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে যাদবপুরে। কিন্তু অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে ২ ও ৪ সেমিস্টারের সিলেবাস। সরকারি নীতি অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীদের তুলে দেওয়া হয়েছে নতুন ক্লাসে। কিন্তু অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে তাঁদের শিক্ষা, মনে করছেন সুরঞ্জন দাসের। মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বললেন, 'অনলাইন শিক্ষকতা কখনওই নিয়মিত ক্লাসরুমের বিকল্প হতে পারে না। কিন্তু আমরা এই মহামারি পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারছি না। ছাত্রছাত্রীরা মার্চের পর থেকে বাড়িতে বসে রয়েছে। আমাদের একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে তাদের কাছে শিক্ষাকে পৌঁছে দেওয়ার।'
কিন্তু যাদবপুরের মতো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সম্পূর্ণ ডিজিটাল মাধ্যমে ক্লাস করা কীভাবে সম্ভব? সুরঞ্জন দাস বলছেন, 'বেসরকারি স্কুল বা কলেজের মতো রিয়েল টাইম অনলাইন টিচিং অর্থাৎ ৩-৪ ঘণ্টা ধরে টানা অনলাইন ক্লাস করানোর মতো পরিস্থিতি আমাদের নেই। সেক্ষেত্রে প্রথমেই প্রয়োজন পর্যাপ্ত ইন্টারনেট ও মোবাইল ডিভাইসের। আমরা সার্ভে করে দেখেছি অনেকের কাছে স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ নেই। আবার অনেকের কাছে স্মার্টফোন থাকলেও আনলিমিটেড ডেটা প্যাক নেই। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচায়, আমাদের ওয়েবসাইটে একটা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেব।'
ঠিক কী এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম? পর্যাপ্ত ডেটা প্যাক ছাড়াই এই প্ল্যাটফর্মে কীভাবে সম্ভব হবে পড়াশোনা? উপাচার্য বলছেন, 'এই প্ল্যাটফর্মে আপলোড করা থাকবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের লেকচার নোটস, পড়াবার ভিডিও, বইয়ের পিডিএফ ও অন্যান্য স্টাডি মেটিরিয়াল। ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের সুবিধা মতো সেখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবে। কাজেই টানা ক্লাস করার মতো ডেটা খরচ হবে না। হোয়াটসঅ্যাপ বা মেলেও শেয়ার করা যাবে সমস্ত তথ্য। আগামী ২৩ অগাস্ট থেকে ইন্টারমিডিয়েট সেমিস্টারের পড়ুয়াদের জন্য এই প্ল্যাটফর্ম খুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝির মধ্যে সিলেবাস শেষ করে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।'
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার জন্যেও প্রয়োজন স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের। প্রয়োজন কিছুটা ইন্টারনেটেরও। অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। এক্ষেত্রে তাদের জন্যেও রয়েছে বিশেষ ভাবনা। উপাচার্য জানালেন, ইতিমধ্যেই তিনি রাজ্য সরকার, সমস্ত বণিকসভা, প্রাক্তনী ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছে আবেদন করেছেন আর্থিক অনুদানের জন্য। মোবাইল ফোনে বললেন, 'আমরা সমস্ত আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে একটা সেন্ট্রাল ফান্ড তৈরি করব। যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের স্মার্টফোন নেই তাদের সেখান থেকে একটি করে মোবাইল ফোন দেওয়া হবে। যতদিন তাঁরা ক্লাস করবেন তাঁদের কাছেই থাকবে সেটি। সিলেবাস শেষ হয়ে গেলে ফোন বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা করে দিতে হবে। তারপর দেওয়া হবে সার্টিফিকেট। আর যাদের পর্যাপ্ত ইন্টারনেট পরিষেবা নেই সেইসব পড়ুয়াদের জন্য আর্থিক অনুদান দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।'
বিপুল এই উদ্যোগে প্রয়োজন প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। উপাচার্য বলছেন, 'শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে আমি আবেদন করেছিলাম তাঁদের ১ দিনের বেতন দেওয়ার জন্য। এই আবেদনে ভালো সাড়া মিলেছে। প্রাক্তনী ছাড়াও যাদবপুরের বাইরের অনেকেই আর্থিক সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন।' তিনি আরও যোগ করলেন, 'সেপ্টেম্বর থেকে নতুন ক্লাস শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। ক্লাস নেওয়ার পদ্ধতি শিক্ষকরাই ঠিক করবেন। তবে আমরা সবসময় খেয়াল রাখব ইন্টারনেট ও মোবাইল ডিভাইস না থাকার কারণে কোনও পড়ুয়া যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। নতুন ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রেও মাথায় রাখা হবে এই বিষয়টি।'
সমস্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে প্রথম এই পদক্ষেপ নিচ্ছে যাদবপুর। আপাতত বিজ্ঞান ও কলাবিভাগের জন্য শুরু হচ্ছে 'ডিজিটাল টেকনোলজির মাধ্যমে ডিসট্যান্স মোডে ক্লাস'। তবে বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রয়োজনীয় প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস সম্ভব নয় অনলাইনে। সেই কারণেই প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস পরের সেমিস্টারে করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। উপাচার্য জানালেন, মোবাইল ও আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্য তৈরি হবে বিশেষ কমিটি। তারাই তথ্য যাচাই করে মোবাইল ও আর্থিক সাহায্য প্রদান করবে।
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI