কলকাতা : ক্লাস টেনের প্রি-বোর্ড পরীক্ষায় কেমিস্ট্রির আগের রাতে ভয় শুরু। কেঁদে ফেলেছিলেন। আশপাশের সবার ভয়-ধরানো কথাবার্তা আরও কুঁকড়ে দিয়েছিল ছোট্ট স্কুলপড়ুয়াকে। পরবর্তীতে ভাল রেজ়াল্ট করতে হলে ক্লাস টেনের রেজ়াল্ট ভাল করতেই হবে, এই কথা সবসময় মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। ভয়ের আরও গভীর তলে যেন তলিয়ে যাচ্ছিলেন। ক্লাস টেনের বোর্ড পরীক্ষার আগের পরীক্ষায় হারতে হয়েছিল কেমিস্ট্রির কাছে।
এখানেই শেষ নয়। পাশ করতে পারেননি ক্লাস টুয়েলভের ইকনমিকসে। বাকি সব বিষয়েই অবশ্য ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করেছিলেন। চোখে স্বপ্ন আঁকা থাকলে পাশ-ফেল যে কোনও অন্তরায়ই নয়, তা নিজের জীবন দিয়ে, জীবনের সাফল্য দিয়ে বুঝিয়েছেন অঞ্জু শর্মা। IAS অঞ্জু শর্মা। ব্যর্থতাকে সাফল্যে বদলে দিতে পেরেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, সাফল্যের জন্য জীবনকে কেউই তৈরি করতে পারে না, ব্যর্থতা ছাড়া। কাজ করছেন গাঁধীনগরে শ্রম ও রোজগার মন্ত্রকের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি হিসেবে। ছিলেন শিক্ষা দফতরের (উচ্চতর ও কারিগরি শিক্ষা) প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারিও।
স্কুল জীবনে ফেল করেও যে তিনি দমে যাননি, তার অন্যতম কারণ তাঁর বাবা-মায়ের তাঁর উপর আস্থা। মা বলতেন, হতাশ হোয়ো না। বাবা-মা বিশ্বাস করতেন, বাচ্চা ভুল থেকেই শিখবে। তাঁরা পরীক্ষার খারাপ ফল নিয়ে হতাশ ছিলেন না। অঞ্জু শর্মার কথায়, তাঁর বাবা-মায়ের সেই শিক্ষা এখনও শিক্ষা দিয়ে যায় তাঁকে।
আরও পড়ুন : দিনমজুর বাবার IAS সন্তান, জানুন হিমাংশু গুপ্তার সাফল্যের কাহিনি
শিক্ষা দিয়েছিল আরও একটি বিষয়। পরীক্ষার আগের যে রাতে প্রস্তুতির খামতির জন্য মাথায় কার্যত আকাশ ভেঙে পড়েছিল অঞ্জু শর্মার, সেই রাতই চোখ খুলে দিয়েছিল তাঁর। সেই রাত আর স্কুলের পরীক্ষায় ব্যর্থতাকেই সিঁড়ি বানিয়ে তিনি পৌঁছেছেন সাফল্যের শিখরে। প্রথমবার বসেই সফল হয়েছেন দেশের অন্যতম কঠিন চাকরির পরীক্ষায়। হয়েছেন IAS।
প্রথম ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তাঁর মন্ত্র ছিল - সিলেবাস অনেক আগে শেষ করা এবং পরীক্ষার আগে ছোট্ট বিরতি নেওয়া। পরীক্ষার আগের রাতগুলিতে বিনিদ্র রজনীযাপন একেবারেই নয়।
স্কুলপড়ুয়াদের সঙ্গে অঞ্জু শর্মা (ছবি সৌজন্য twitter.com/anju_sharma_ind)
উনিশশো একানব্বই সাল। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন UPSC-তে বসার। এবং প্রয়োগ করেছিলেন তাঁর ফর্মুলা। আগে থেকে সিলেবাস শেষ করো আর যতটা সম্ভব রিভিশন। পেরেওছিলেন। প্রথমবারই সবকটা স্তরেই সফল। এবং IAS।
অঞ্জু শর্মার টিপস
চাই অদমনীয় ইচ্ছেশক্তি, ফোকাস এবং দৃঢ়চেতা মনোভাব। অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এবং ফল কী হবে তা নিয়ে ভয় করলে একেবারেই চলবে না। নিজের গোটা জীবন পরীক্ষায় ঢেলে না দেওয়ার পরামর্শ অঞ্জুর। অযথা অনুকরণ না করে পরীক্ষার্থীদের নিজের সুবিধামতো পড়াশোনার স্ট্র্যাটেজিতেই জোর দিয়েছেন তিনি। আর অভিভাবকদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, সন্তান তো এমনিতেই চাপে, তার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি না করে কথা বলুন, বুঝুন, ভালবাসুন। পরীক্ষায় কী ফল হবে তার উপর গোটা জীবন নির্ভর করে না। সন্তান যাতে ব্যর্থতাকেও সামনা করতে পারে, তার জন্য তাকে প্রস্তুত করতে সাহায্য করতে পারেন অভিভাবকই।
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI