কলকাতা: কাশ্মীরের পাহাড়ে ঘেরা এক ছোট্ট গ্রাম জাগি। এলাকার নাম পুলওয়ামা। এখানেই নিত্যদিন দিনমজুরের কাজ করে সংসারের ভরণপোষণ করতেন এক যুবক। দিনে যা আয় হত, তা দিয়েই চলত সংসার। তবুও পাহাড়ের কোলে শুয়ে শুয়েই দিনরাত স্বপ্ন দেখতেন যুবক উমর। উমর আহমেদ গনি। ডাক্তার হবেন, একদিন বড় ডাক্তার হবেন তিনি, এই স্বপ্ন তাঁকে ঘুমোতে দিত না। আর এই স্বপ্নের পথে হেঁটেই সর্বভারতীয় ডাক্তারি পরীক্ষা নিট (NEET)-এর জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন উমর। পরীক্ষায় বসেন, আর ভাগ্যের দরজা খুলে যায় তাঁর। দিনমজুর থেকে ডাক্তারি পাশ করে শুরু হয় তাঁর স্বপ্নের পথে যাত্রা।


কেমন ছিল উমরের কষ্টের দিনগুলো?


কাশ্মীরের পুলওয়ামায় একটি ছোট্ট গ্রামে বাড়ি গনির। ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন বড় হয়ে ডাক্তার হবেন। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই ডাক্তার হওয়ার এক প্রবল ইচ্ছে জেগে ওঠে তাঁর মধ্যে। কিন্তু বার বার নানা প্রতিবন্ধকতা তাঁকে ঘিরে ধরেছিল। পরিবারে অর্থাভাব ছিলই। তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাই সংসারের ভার নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন গনি। ১৬ বছর বয়স থেকেই দিনমজুরের কাজ শুরু করেছিলেন। দৈনিক পারিশ্রমিক ছিল ৬০০ টাকা।


নিট পরীক্ষার জন্য কঠোর প্রস্তুতি


এক সাক্ষাৎকারে উমর আহমেদ গনি জানান, দিনমজুরের কাজ করার পর বিকেল ৪টে থেকে রাত্রি ১২টা পর্যন্ত চলত তাঁর পড়াশোনা। তার মাঝখানে মাত্র ২ ঘন্টার জন্য একটু ঘুমিয়ে নিতেন উমর। আর তারপর ফের রাত্রি ৩টে থেকে উঠে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলত তাঁর পড়াশোনা। স্বপ্নের পথে দৌড়ে ক্লান্ত হননি উমর। NEET UG 2023 পরীক্ষায় ৬০১ র‍্যাঙ্ক করে সফলভাবে ডাক্তার হওয়ার প্রথম ধাপ পেরিয়ে যান উমর আহমেদ গনি। 


সাফল্যের কাহিনি


২০২৩ সালের ৭ মে NEET UG 2023 পরীক্ষায় বসেন উমর আহমেদ গনি। মোট ৩৭,২৭৬ জন শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় নাম নথিভুক্ত করিয়েছিলেন যার মধ্যে ৩৬,৪৩১ জন পরীক্ষায় বসেন। তাদের মধ্যেও ২০,৫৬৪ জন উত্তীর্ণ হন পরীক্ষায়। উমর আহমেদ গনি তাদেরই একজন। তবে অন্যদের মত উমরের জীবন সোজা পথে হাঁটেনি কখনও। শত বাধা, প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নিট পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে উমর বুঝিয়ে দিয়েছেন জীবনে নিষ্ঠা, অনলস পরিশ্রম আর জ্ঞানের মাধ্যমেই সমস্ত বাধা কাটিয়ে ওঠা যায়।ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় এড-টেক সংস্থা 'ফিজিক্সওয়ালা'র ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরও হন উমর। ১০ লক্ষ টাকার অনুদান পান। উমর বিশ্বাস করেন, 'টাকা-পয়সার অভাব কখনও সাফল্যের পথে বাধা হতে পারে না। কঠোর পরিশ্রমই সাফল্যের একমাত্র চাবিকাঠি।' এক সাক্ষাৎকারে উমর জানান, যে সমস্ত শিক্ষার্থী টাকা-পয়সার অভাবে বই কিনতে পারছেন না, তারা খুব সহজেই অনলাইনে প্রচুর স্টাডি মেটেরিয়াল পেয়ে যাবেন। ইন্টারনেটকে এভাবে পড়াশোনার কাজে লাগালে, শিক্ষার্থীদের অনেক উপকার হবে।


ডাক্তার হয়ে কী করতে চান?


উমর জানিয়েছেন যেহেতু তাঁর উপরেই সংসার ভরণপোষণের ভার, তাঁর অনুজরাও যাতে ঠিকভাবে পড়াশোনা করে বড় হতে পারে সে দিকে তিনি খেয়াল রাখবেন। আর এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করে তিনি কাশ্মীরে তাঁর নিজের এলাকাতেই থাকতে চান, সেখানকার কোনও সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এলাকার মানুষদের সেবা করতে চান উমর আহমেদ গনি।


আরও পড়ুন: IAS Success Story: ৩৫ বার ফেল! তবু মাঠ ছাড়েননি, ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে কীভাবে সফল IAS হলেন বিজয় বর্ধন?


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI